GuidePedia

0
নোট: ডাক্তর বালিকারা আমার অতি পছন্দের। আমার তরুণ বয়সে (আমি কি বুইড়া অইয়া গেছি!) কয়েকজন ডাক্তর আমাকে তাদের জীবনে পাইতে চাইছেন। তাদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সত্য কয়টা ঘটনা বলছি।

ঘটনা: রামেক
ডাক্তরদের বিষয়ে আমি বছরখানেক আগে একটা লেখা সামুতে দিছিলাম। তারপর ধরেন, আমার গুষ্টি উদ্ধার। তাই বলে চুপ কইরা থাকন যায়। রাজশাহীদের সম্বাদিকগো পিটাইছে ইন্টার্ণি ডাক্তররা। ওগো কাম সম্বাদিক পিটানো! সেই তর্ক না করে কিছু অভিজ্ঞতা শেযার করি।

এর আগে দেখলাম- বারডেমে চিকিৎসকরা এক রোগীর আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকছে। আর রোগীর স্বজনদের মারধর এখন হসপিটালে একটা নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপান্তর হয়েছে। আবার বলপ্রয়োগে শান্ত হতেও দেখা যায়।

যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের ভুল চিকিৎসার দায় স্বীকার করেছে ল্যাব এইড। ক্ষতিপূরণও দিয়েছে। একজন শিক্ষকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।

এক.
মাস দুয়েক আগের কতা। বঙ্গবন্ধু হসপিটালে আউটডোরে গেছি, নিজের একটা সমস্যা লইয়া। তিনজন ডাক্তার বসে আছেন। দুইজন স্মার্টফোনে ব্যস্ত। একজন নারী ডাক্তার বিরক্তির সাথে কইলেন- বলেন-কী সমস্যা? কইলাম। ডাক্তর কি লিখবো- এইডা লইয়া টেনশনে। সিরিয়াল এন্ট্রি করা এক নার্স বললো আফা দুইডা সিল মাইরা দ্যান, আর কন স্ট্রিম বাথ লইতে! তাই দিলো। আমি চইলা আইলাম।

দুই.
২০০৯ সালের কতা। বারডেম হসপিটালে। শাহবাগে। সদ্য পিতা হলাম। ডাক্তর কইলো পুলা পুরাই সুস্থ। ফটো লাইটের তলে কতক্ষন থাকবো, তারপর লইয়া যাইবো ওয়ার্ডে। আমি তখনো পিতা হবার পর ফেসবুকীয় উচ্ছ্বাস উপভোগ করতে পারছিলাম না। মিষ্টি আনা লাগবো- এক নার্স কইলো তারাতারি মিষ্টি আনেন।

ছোট ভাইকে পাঠাইলাম। আমার মা তার প্রথম নাতিকে কোলে লইয়া বইসা আছেন। আমাকে ডেকে কইলেন- নাতি তো কান্দে আস্তে। একটা সমস্যা আছে। ডাক্তররে ক। আমি একজন ডাক্তরের কাছে যাই। তিনি কইলেন- এইডা ব্যাপার না।

আমার মা মানতে চাইলেন না। পরে ডাক্তর আমগো জোরাজুরি দেইখা কইলো পাশে শিশু ওয়ার্ডে লইয়া যান। দ্রুত নিলাম। ছেলেটার শরীর নীল অইয়া যাইতেছে। ডাক্তর বিপ্লব কইলো এখন লাঞ্চ আওয়ার। পরে আয়েন। আমি অনেক অনুনয় করলাম। কিন্তু ডাক্তরের মন গলাইতে ব্যর্থ। শেষে চিৎকার করলে সিনিয়র একজন এসে কইলেন- এ বাচ্চাকে এখনই আইসিইউতে দাও। তারপর স্কাবুর সামনে ১৯ দিন আমরা কাটাইছি।

তিন.
আমার মা অসুস্থ। তার মেয়েলি সমস্যা। আমি এই ডাক্তার ওই ডাক্তার দেখাই সবাই কয় কিচ্ছু অয় নাই। পরে একটা টেস্ট তিনবার করানোর পর পরমাণুতে ধরা পড়লো তার সমস্যা আছে। তার আগে ল্যাব এইড, পিজি এবং ইবনে সিনায় টেস্ট হইলো। সব ভালো।

চার.
আমার আব্বা অসুস্থ। একটা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তখন মোবাইলটা নতুন আইছে। ডাক্তারে খুঁইজা পাই তো নার্সরে পাই না অবস্থা। রাইতের কালে নার্স প্রেমালাপে মগ্ন। আমি খুবই বিনীতভাবে তার সহায়তা চাইলে- যান, আইতাছি এইসব কইয়া পার করে। পরে আর কি! উপরের থেকে চাপ দিয়া কাম করাইতে অইলো!

পাঁচ.
আম্মার দাঁতের সমস্যা। পিজি হসপিটালের ডেন্টাল বিভাগের দ্বারস্থ হইলাম। কইলো ফিলিং করলে চলবো। তা করাও হলো। কিন্তু নিয়ম মাননের পরে দুই ঘন্টা পরে ফিলিং হাওয়া। পরে বাইরে এক ডাক্তারকে দেখাইলাম। কইলো অপারেশন লাগবো। আসলে তাই ইনফেকশন হয়ে গেছে, মাড়িতে। অপারেশন করানো হলো। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি, আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ।

ছয়.
আমার উচ্চ রক্তচাপের বেরাম। ঢাকা মেডিকেল থেকে কইলো হার্টে প্রবলেম। ছুইটা গেলাম হার্ট ফাউন্ডেশনে। সেখানকার ডাক্তাররা টেস্ট কইরা কইলো ঢামেক ভুলি কইছে।

সাত.
আমার এলাকার এক ভদ্র মহিলা ক্যান্সারে আক্রান্ত । লইয়া গেলাম ক্যান্সার হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার দেখাইতেই দিন শেষ। পরের দিন কইলো রেডিও থেরাপি লাগবো- তয় সিরিয়াল পাইতে পাইতে দুই মাস। ট্যাকা দিলে দ্রুত।

এ রকম ঘটনা লিখতে লিখতে পাতা ভরে যাবে- শেষ হবে না।

এবার কিছু ভালো খবরও বলি-

এক.
আমাদের এক ছোট ভাই এক্সিডেন্ট কইরা আহত। তারে কুমিল্লা মেডিকেলে নেয়া অইলো। ডাক্তাররা তারে ৬ ঘন্টা অপারেশন করছে। সব ডাক্তরা ছুটোছুটি, মনে অইবো তাগো। আসলেই তো তাই অওনের কতা।

পরে ঢাকায় তার অপারেশন অইছে- ঢামেকে। ৭ ঘন্টা। ডাক্তার ফিরোজ কাদির করছে। তখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হইছে, ডাক্তররা আসলেই মহান।

দুই.
আমার উচ্চ রক্তচাপ লইয়া অনেক ঘাটের পানি খাইবার পর বরেন চক্রবর্তীর দ্বারস্থ অইলাম। তার পরামর্শে ভালো আছি- আলহামদুল্লিাহ। সমস্যা হলে ফোন করা যায়, পরামর্শও দেন। বিরক্ত হন না।

তিন.
আমার এক খালা অসুস্থ। তাকে লইয়া সলিমুল্লায় গেলাম। সেখানে আমাদের ছোট ভাই হিমু পড়তো। তার সুবাধে চিকিৎসকরা খালার অতি যত্নে অপারেশন করে দিয়েছেন।

আমার নিচের উদাহরণগুলো বেশি করে চাই। উপরের গুলো এড়িয়ে চলতে চাই। সম্বাদিক পিটাইয়া, স্যার বলতে বাইধ্য কইরা ডাক্তররা আসলে নিজেদের অবস্থান হারাচ্ছেন। আমরা সেটি চাই না।

দল-মত- সামর্থ-ধর্ম-শ্রেণি বিবেচনা করে চিকিৎসা নয়। সবার প্রতি সমান গুরুত্ব দরকার। খুবই দরকার। একজন ডাক্তারের ক্ষণিকের ভুল সিদ্ধান্ত একজন মানুষের দৈহিক মৃত্যু ঘটাতে পারে। সচেতন হলে এটি এড়ানো সম্ভব।

আমাদের সামনে ডাক্তারের অবহেলার অনেক চিত্র আছে। অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ থেকে ৭ জন ছাত্র শিক্ষক ডাক্তারের অবহেলায় মারা গেছেন। এমন মৃত্যু অমার্জণীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য। টাকা দিয়ে দায় সারলেও একজন মানুষের জীবন থামিয়ে দেয়ার অধিকার কারো নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top