GuidePedia
Latest News

0


বাংলাদেশের মানুষ বিতর্ক পছন্দ করে। আমরা কখনও কোনো ইস্যুতে একটি মতে আসতে পারি না। এটা আমাদের রক্তে নেই। যে জাতি স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো বেসিক বিষয়গুলো বিগত ৪৩ বছরে সমাধান করতে পারেনি, সেই জাতির কম্পিউটারে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক এক যুগে মিটিয়ে ফেললে কিভাবে চলবে? তাই কিছুদিন পর পর এটা নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরী হয়, তারপর অন্যান্য সকল বিতর্কের মতো এটাও ঝিমিয়ে যায় সময়ে সাথে। সমাধান আর হয় না। নতুন আরেকটি বিতর্কের জন্ম হলে তখন সবাই ওটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চরম বিনোদন আমাদের। এই বিনোদনের কারণে আমাদের টিভি টকশো-গুলো খুব জনপ্রিয়। একই কারণে বাংলাদেশে ফেসবুকও জনপ্রিয়।
গত বুধবার থেকে আবার শুরু হয়েছে সেই বাংলা ভাষার কম্পিউটারে ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক। শুরুটা হয়েছিল এভাবে - অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বাংলা লেখার জনপ্রিয় অ্যাপ রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয় গুগল প্লে স্টোর থেকে অপসারণ করেছে গুগল কর্তৃপক্ষ। বিজয় কি-বোর্ডের কপিরাইট লঙ্ঘন করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগল। এই নিয়ে প্রতিবদেন করে প্রিয়.কম।
এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে নিজের ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি-বোর্ড লেআউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন তিনি।
অ্যাপ অপসারণের বিষয়ে ইউনিবিজয় অ্যাপের ডেভেলপার আরিফ রহমান জানান, "গুগলের এই সিদ্ধান্তে আমি বিষ্মিত হয়েছি।" তিনি আরও জানান, অ্যাপটি তৈরিতে ইউনিজয় লেআউট ব্যবহার করা হয়েছিল।
গুগল প্লে স্টোর থেকে রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয় কি-বোর্ড অপসারণ নিয়ে শুরু হয়ে গেলো বিতর্ক। এবং পুরো ঝগড়াটি যথারীতি ব্যক্তিগত আক্রমণে পরিণত হলো (বাংলাদেশে থাকবেন, আর ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হবেন না, এটা তো হবার নয়)। এমনকি জনাব মোস্তফা জব্বারকে হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে তর্কে-বিতর্কে যুক্ত হচ্ছেন। তারই কিছু কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি এখানে।
একটি বিষয় এখানে বলে রাখি, তাহলো- বিজয়, অভ্র, রিদমিক, ইউনিবিজয় কিংবা ইউনিজয় - কারো সাথেই আমার কোনওরকম স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে ব্যক্তিজীবনে আমি বিজয় এবং অভ্র দুটোই ব্যবহার করে থাকি - হাতের কাছে যখন যেটা পাই। আবার অনেক সময় প্রিন্টিং-এর প্রয়োজনেও। তাই কারো প্রতি আমার কোনও রাগ/অভিমান/ঘৃণা কিছুই নেই। পণ্যগুলোর প্রস্তুতকারক কাউকে কাউকে চিনি। আবার কাউকে চিনিও না। তার প্রয়োজনও নেই। আমি শুধু চেষ্টা করছি, প্রশ্নগুলোর সঠিক দৃষ্টভঙ্গিগুলোকে সাজিয়ে দেয়ার, যেন চিন্তা এবং ভাবনার জায়গাগুলো একটি সঠিক পথে পরিচালিত হয়। এর বেশি কিছু নয়।
পাশাপাশি হাসিন হায়দার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই বিতর্কের কিছু সঠিক জবাব দিয়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে। তাই তার কিছু কথাও এখানে কোট করছি।

প্রশ্ন ১. কীবোর্ড লেআউট কি প্যাটেন্ট হতে পারে?

হাসিন হায়দার: প্যাটেন্টের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, নিজের মেধাপ্রসূত কোন জিনিসের প্যাটেন্ট করা সম্ভব। সেটা কি-বোর্ড লেআউট হলেও প্যাটেন্ট করা যায়, উদাহরণ চাইলে বলা যায় যে ইংরেজি কি-বোর্ডের এখনকার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত QWERTY লেআউট কিংবা ডিভোরাক (Dvorak) লেআউটও প্যাটেন্ট করা। মোস্তফা জব্বারও তার বিজয় লেআউট প্যাটেন্ট করেছেন, এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। স্বীকার করতে কষ্ট লাগলেও এটা সত্যি যে কম্পিউটারে বাংলা লেখার বিষয়টা সত্যি করার পেছনে মোস্তফা জব্বারের ভূমিকা রয়েছে।

প্রশ্ন ২: বিজয় কি-বোর্ডের সাথে ইউনিজয়ের তো বেশ কিছু কি'র মিল নেই। তাহলে সেটা কপিরাইট ভাঙ্গলো কিভাবে?

হাসিন হায়দার: ধরুন যেই লোক গ্রাফিক আইকন বানিয়ে বিক্রি করে, আপনি তার কোন আইকন কিনে একটু মডিফাই করে বিক্রি করতে পারেন না, এমনকি ফ্রি ডিসট্রিবিউটও করতে পারেন না। সেই আইকন আপনি কিনলেও যে কোন ধরনের ডিসট্রিবিউশনের আগে আপনাকে অবশ্যই অরিজিনাল অথরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নাহলে অরিজিনাল অথর বা কর্তৃপক্ষ আপনাকে ডিএমসিএ নোটিশ পাঠাতে পারে, এই অধিকার তার আছে। এভাবেই ওপেন সোর্স বা ক্লোজড সোর্স সমস্ত সফটওয়্যারের লাইসেন্সিং সিস্টেম কাজ করে। আপনি আজকে অসীম মেধাবি একজন প্রোগ্রামার হয়ে যদি ফটোশপ পুরো নিজে লিখে ফেলেন, একদম হুবুহু ক্লোন করে ফেলেন - তাও আপনি সেটা ডিস্ট্রিবিউট করতে পারবেন না। এইযে অ্যাপলের ম্যাগসেফ কানেকটর, আপনি কি জানেন যে এটারও প্যাটেন্ট করা আছে? চাইলেই কোন হার্ডওয়্যার কোম্পানি ম্যাগসেফের মত করে তাদের চার্জারের কানেক্টর বানাতে পারবে না।
জাকারিয়া স্বপন: এই বিতর্কটি বেশ পুরনো। যারা বিজয় কি-বোর্ড একটু এদিক-সেদিক পরিবর্তন করে সেটাকে ব্যবহার জায়েজ করার চেষ্টা করেছেন, তাদের কারো কারো সাথে অতীতে এটা নিয়ে আমরা কথা হয়েছে। তাদেরকে যা বলেছিলাম, তার একটু এখানে আবারো লিখছি।
বর্তমান কোনও সিস্টেম থেকে অল্প কিছু পরিবর্তন করে সেটা নতুন আরেকটি প্যাটেন্ট হতে পারে। তবে সেই পরিবর্তনের পেছনে যথেষ্ট যুক্তি, গবেষণা এবং পরিমাপযোগ্য উন্নয়ন লাগবে। আপনি চাইলেই একটি কি-বোর্ডের একটি বা দুটি কি ভিন্ন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে সেটা আপনার দাবি করতে পারবেন না। একই বিষয়টি যদি আপনার নিজের বেলায় ঘটে, সেটা আপনি নিজেও কিন্তু পছন্দ করবেন না। এটা অনেকটা ফ্রড কেস (জালিয়াতি) হয়ে যেতে পারে। আমাদের কারো যদি নতুন কোনও উদ্ভাবন থাকে, তাহলে সেটার প্রটেকশনের জন্যেই কিন্তু একই আইন প্রযোজ্য। যারা নতুন কি-বোর্ড প্রস্তাব করছেন, তাদের উচিৎ হবে ওটাকে কপিরাইটের জন্য পাঠানো। এবং তারা যদি সেটাকে অনুমোদন দেয়, তাহলে তো কথাই নেই। আপনাদের ব্যবহার করতে কোনও সমস্যা নেই। তবে যেভাবে কি-বোর্ড পরিবর্তন করা হয়েছে, তাতে সেটার কপিরাইট পাওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।
রাসেল আব্দুল্লাহ আল মামুন: জনাব মোস্তফা জব্বার ২৮ বছর ধরে এই এক কীবোর্ড লে-আউট আপন করে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করছেন। এই দেশের বোধকরি ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ বিজয় ব্যবহারকারী। আর বিজয় লে-আউট কার সেটা কারই অজানা নয়। হঠাৎ করে বিজয় অনুকরনে যিনি বা যারা (একুশে অর্গ) ইউনিকোড লেখার হুবুহু কীবোর্ডটা তৈরি করেছেন তারা কি জানতেন না যে এটা বিজয়েরই অনুকরন? তারা জানতেন, নিশ্চই জানতেন। না জানলে এটার নাম হয়তো অন্য কিছু হতো, আর যাই হো ইউনি+বিজয় ও পরবর্তিতে ইউনি + জয় হতো না।
আপনি তর্কের খাতিরে বলতেই পারেন নামের শেষে লাগানো জয়টা ও কি তার প্যাটেন্ট করা? না, তা তার করা নয়। তবে আপনার অনুকরনই বলে দেয় আপনি বিজয়কে অনুকরন করেছেন। এখন কথা হলো এই অনুকরন আপনি কেনো করেছেন? আমার দৃঢ় বিশ্বাস এদেশের মানুষ যারা বিজয় লে-আউটে অভ্যস্থ্য তাদের সেই লে-আউটে ইউনিকোড ফন্টে অনলাইনে বা যেখানে আসকি সমর্থন নেই সে সকল জায়গায় যেনো তার চর্চার ব্যত্যয় না ঘটিয়ে সাচ্ছন্দে লিখতে পারে সেজন্যেই আপনার এই পরিশ্রম ও সার্থক কীবোর্ডের অবতারনা। এখানে আপনার কোন বানিজ্যিক চিন্তা ছিলো কিনা সেটা আমরা কেউই জানিনা এবং ধরে নেই সেখানে আপনার কোন বানিজ্যিক লাভ লোভ ছিলোনা।
যারা ইউনিবিজয় বা ইউনিজয় লে-আউটের ধারক বাহক তারা কি আমাকে কেউ বলতে পারেন, কেনো আপনি বিজয়কেই অনুকরন করলেন? ৩ কী ফারাকের ন্যাশনালকে কেনো অনুকরন করেন নি? আপনি ন্যাশনালকে অনুকরন করলেই তো পারতেন কেনো করেন নি? আমি এতকিছু ধরে নিলাম সে সাথে কি এটাও ধরে নিবো আপনার এই প্রচেষ্টায় বিজয়কে বানিজ্যিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করাও আপনার উদ্দেশ্য ছিলো?
বিজয়কে যদিও বানিজ্যিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার কিছু নেই; কারন এই দেশের ১ কোটি মানুষ বিজয় বিজয় ব্যবহার করলে ১২০ টাকা দিয়ে যদি সিডি কিনে নিতো তাহলে বিজয় কতো টাকা ব্যবসা করতো একবার ভেবেছেন? আপনাদের ফ্রি খাওয়া ও ফ্রি দেওয়ার মানসিকতার কারনে এদেশে কোনদিন একটা এপল/ মাইক্রোসফট / সিসকো গড়ে উঠবে না। হবেনা এদেশের বুয়েটের ভালো ছেলেগুলোর নিজ দেশে চাকুরী করে খাওয়ার পরিবেশ পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা। বলতে পারেন সেজন্যে দায়ী কে?

প্রশ্ন ৩: বিজয়ের মালিক কে? মোস্তফা জব্বার নাকি পাপ্পানা? নাকি অন্য কেউ?

হাসিন হায়দার: তিনি বলেছেন যে বিজয় তার জিনিস, তিনি কোথাও এটা বলেছেন বলে শুনিনি যে তিনি বিজয়ের প্রোগ্রামার। পাপ্পানা বা আরও অনেকে তার প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিজয় কি-বোর্ড ইন্টারফেস কোড করে দিয়েছেন, তার মানে এই না যে এটা পাপ্পানার প্রোডাক্ট। বরং পাপ্পানা বিজয়ের একটা ভার্সনের প্রোগ্রামিং করেছেন, তার আগে এবং তার পরেও আরও অনেকেই বিজয়ের প্রোগ্রামিং করেছে। আপনি যখন আপনার ক্লায়েন্টের জন্য কোন প্রোডাক্টের কোড লেখেন তখন সেটা আপনার প্রোডাক্ট হয়ে যায় না।
জাকারিয়া স্বপন: হাসিন হায়দারের উত্তরের সাথে আমি আরেকটু যুক্ত করতে চাই। বিভিন্ন ব্লগ পড়ে আমার মনে হয়েছে, অনেকেই বিশ্বাস করেন, মোস্তফা জব্বার এটা কারো কাছ থেকে চুরি করে নিয়েছেন; কিংবা অন্য কেউ প্রোগ্রাম লিখে দিয়েছেন, তা তিনি নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। বিভিন্ন মানুষের বক্তব্য/মন্তব্য পড়লেও এর প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়।
মানুষ এভাবে চিন্তা করতে পারে, তা আমার মাথায় আসেনি কখনই। এটা শুনলেই আমার হাসি পেয়ে যায়। "বিজয়" পণ্যটির মালিকানা যতদূর জানি আনন্দ কম্পিউটার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের। এবং সেখানে মোস্তফা জব্বারের মালিকানা রয়েছে, যেভাবে বিল গেটসের মালিকানা আছে মাইক্রোসফটে। যে পাপ্পানা বিজরের একটি ভার্সনের কোড লিখেছিল, সেই পাপ্পানা এখন মাইক্রোসফটে কাজ করছে। তিনি কি দাবি করতে পারবেন যে, মাইক্রোসফটের পণ্যগুলো (যেগুলোতে তার কোড আছে) তার? কোনও পণ্যের জন্য কাজ করলেই সেটার কপিরাইট/মালিকানা তার হয়ে যায় না।
বাংলাদেশের অনেক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আমি কথা বলে দেখেছি, তারা মনে করেন যে, যেহেতু তিনি কোড লিখছেন, তাই কোডের কপি তার কাছে থাকতে পারে, এবং তিনি ওই কোডের মালিক। তিনি চাইলেই ওই কোড অন্য আরেকজন কিংবা আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারেন। ওই কোডের মালিক যে তিনি নন, এটা কিছুতেই তাদেরকে বুঝানো যায় না।

প্রশ্ন ৪: পাপ্পানার টাকা দেননি মোস্তফা জব্বার। এটা কি ঠিক হয়েছে?

জাকারিয়া স্বপন: এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। এবং সেই ক্ষেত্রে পাপ্পানা'র প্রকাশ করা একটি স্ক্রিনশট বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে। সেই স্ক্রিনশট দেখে যতটা বুঝতে পারছি, পাপ্পানা (সিএসই, বুয়েট) বিজয়ের একটি ভার্সনের কোড লিখেছিলেন। তার সাথে আনন্দ কম্পিউটারের শর্ত কী ছিল, তা আমরা কেউ জানি না। সেটা পাপ্পানা যেমন বলেননি, আনন্দ কম্পিউটারও প্রকাশ করেনি। তাই ঠিক কী টার্মস ভেঙ্গে ছিল আমরা জানি না। আমরা পুরোটা না জেনেই বিভিন্ন মন্তব্যে সেটা ব্যবহার করি।
তবে একজন প্রফেশনাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তখন পাপ্পানা সঠিকভাবে তার এক্সপ্রেশন বাইরে প্রকাশ করেছেন বলে আমার মনে হয়নি। হয়তো তখন তার বয়স কম ছিল, তাই হয়তো আবেগের বসে ওভাবে স্ক্রিনশট নিয়ে বাইরে প্রকাশ করেছিলেন। আজ তিনি মাইক্রোসফটে কাজ করেন। আমি নিশ্চিত, মাইক্রোসফটের সাথে যদি কোনও টার্মস ভাঙ্গা হয়, সেটা তিনি এভাবে প্রকাশ করবেন না। তাতে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্টাফদেরকে অনেক টার্মস মেনে কাজ করতে হয়। আমরা সেগুলো হয়তো মানি না, কিংবা পড়েও দেখি না। তবে, বাংলা কম্পিউটারে কিভাবে ব্যবহৃত হবে, কার অধিকার কী - এই সব বিষয়ে ওই স্ক্রিনশটটি খুবই বেমানান।
আপডেট: এই লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর, জনাব মোস্তফা জব্বার জানিয়েছেন যে, বিজয় কীবোর্ড ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রকাশ্য অনুষ্ঠান করে জন্ম নিয়েছে। বিজয় কপিরাইট হয়েছে ১৯৮৯ সালে। প্যাটেন্ট ফাইল হয়েছে ১৯৯২ সালে, আর প্যাটেন্ট পেয়েছে ২০০৪ সালে। এসবের সাথে পাপ্পানার কোনও সম্পর্ক নেই। পাপ্পানা ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে বিজয়-এর একটি সংস্করণ তৈরি করেন। সফটওয়্যারটি শেষ না করা অবধি তাকে টাকার পুরোটা দেয়া হয়নি। কিন্তু যেদিন তিনি সফটওয়্যার জমা দিয়েছেন সেদিন পুরো টাকাই পেয়েছেন। সেই সংস্করণ আলাদা কপিরাইটও হয়েছে।

প্রশ্ন ৫: মোস্তফা জব্বার কি গুগলের কাছে অভিযোগ করেছেন?

হাসিন হায়দার: মোস্তফা জব্বার প্লেস্টোর থেকে রিদমিক কিবোর্ডের জন্য ডিএমসিএ পাঠিয়েছেন। সেটা তিনি করতেই পারেন। বিজয় তার ব্যবসা।
কেউ যদি বিজয়ের কপি করে তাহলে আমি মনে করি লিগ্যাল স্ট্যান্ডপয়েন্ট থেকে ডিএমসিএ পাঠানোর অধিকার মোস্তফা জব্বারের অবশ্যই আছে। আমি তার সাফাই গাইছি না মোটেও। তিনি হয়তো পারতেন রিদমিক বা অভ্রতে ইউনিজয় কিবোর্ডের বিষয়টা খেয়াল করেও এটা নিয়ে কিছু না বলে থাকতে। হয়তো তিনি রিদমিকের জনপ্রিয়তা দেখে এটাকে ডিএমসিএ না পাঠাতে পারতেন।
কিন্তু উনি যতদিন ডিএমসিএ পাঠাননি, আপনি কি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন? আজ উনি ডিএমসিএ পাঠানোর পর সবাই তাকে গালাগালি করছে যেটা আমি মনে করি পুরোই ইমম্যাচিউরিটি। কম্পিউটারে বাংলা আজ এই পর্যায়ে আসার পেছনে মোস্তফা জব্বারের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে সেটা অস্বীকার করার কিছু না।

প্রশ্ন ৬: বিজয় আমার পছন্দ নয়! কী করবো?

হাসিন হায়দার: আপনি বিজয় পছন্দ না করলে সেটা ব্যবহার করবেন না, এমনকি বিজয়ের 'মত' ইউনিজয়ও ব্যবহার করবেন না - কেউ তো আপনাকে বাধ্য করেনি! নিজের লেআউট বানিয়ে নিন - নিজে ব্যবহার করুন, অন্যদেরকে ব্যবহার করান। কিন্তু এটা নিয়ে গালাগালি করা আমার কাছে মনে হয় একদমই শোভন নয়, বরং অত্যন্ত অশোভন!

প্রশ্ন ৭: ভাষা নিয়ে ব্যবসা করা কি ঠিক?

জাকারিয়া স্বপন: মোস্তফা জব্বার ভাষা নিয়ে ব্যবসা করছেন সেটা অনেকেই মনে করেন। তাই অনেকেই তার বিরুদ্ধে কটুকথা বলাটা জায়েজ বলে মনে করেন। একজন কবি যদি তার কবিতার বই বিক্রি করে রয়ালিটি পেতে পারেন, একজন সাহিত্যিক যদি তার রয়ালিটি পান, বাংলা একাডেমি যদি বাংলা অভিধান প্রকাশ করে বিক্রি করতে পারেন, তাহলে একজন মানুষ একটি কি-বোর্ড এবং সফটওয়্যার তৈরী করে কেন বিক্রি করতে পারবেন না - সেটা কেউ বুঝতে চাইছেন না। এটা হয়তো একটা হালকা সেন্টিমেন্ট যা মানুষের ভেতর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভ্র তার সফটওয়‌্যার বিনামূল্যে দিয়েও তার ডেভেলপমেন্ট খরচ পোষাতে পারে, কিন্তু আরেকজন সেটা না-ও পারতে পারে। তাই বলে তাকে দোষ দেয়া যাবে কি? শর্তে না পোষালে ব্যবহারকারীরা যদি সেটা ব্যবহার করবেন না। কিন্তু তাকে গালি দিতে হবে কেন!
ফেসবুকে একটি বড় গোষ্ঠীকে দেখি, তারা বিজয়ের ব্যবসা বন্ধ, লাল বাতি ইত্যাদি মন্তব্য করেন। এই পৃথিবীতে যেকোনও ব্যবসারই উত্থান-পতন রয়েছে। অ্যাপল একবার প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে চলে গিয়েছিল; আবার এখন যা বিশ্বের সবচে মুনাফাকারী প্রতিষ্ঠান। ‍"ভাষা নিয়ে ব্যবসা" - এটা খুবই চটকদার একটি কথা। এটা দিয়ে অনেকেই হয়তো নিজেকে ভাষাপ্রেমী হিসেবে প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তারা একবারও ভাবছেন না, বিজয় কিংবা মোস্তফা জব্বার ভাষাকে আটকে দেননি। আমরা চাইলেই যে কেউ নিজের মতো আরেকটি কি-বোর্ড তৈরী করে নিতে পারি। কিংবা সরকার তার একটি প্রমিত কি-বোর্ড (যা এখনও রয়েছে) সবার জন্য চালু করে দিতে পারে। সেটা আমরা সবাই ব্যবহার করতে পারি। আরেক জনের সম্পদ ব্যবহার করবো, আবার তাকে গালিগালাজও করবো - এটা হয়তো এই দেশেই সম্ভব।

প্রশ্ন ৮: বিজয় নিজে কি কপিরাইট ভাঙ্গছে না? তারা কি মুনির কী-বোর্ড থেকে কপি করেছেন?

জাকারিয়া স্বপন: হয়তো বিজয় অন্য কোনও কি-বোর্ড থেকে কিছু সাহায্য নিয়েছে। কিন্তু সরকার তো বিজয়কে নিজস্ব একটি লে-আউট হিসেবে কপিরাইট দিয়েছে। আমরা কেন সেটাকে মানতে চাইছি না? উপরে হাসিন হায়দারের উত্তরটি আবারো উল্লেখ করছি। যদি কারো বিজয় পছন্দ না হয়, তাহলে আমরা ব্যবহার করবো না। ব্যাস।
আর যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে, বিজয় অন্যের কপিরাইট ভেঙ্গেছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করলেই হয়। সেটা নিশ্চই জিতে যাওয়া যাবে।

প্রশ্ন ৯: কাগু, ছাগু ইত্যাদি বলে গালি দিচ্ছি কেন?

জাকারিয়া স্বপন: কেউ হয়তো বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, এই শব্দগুলো আমি বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্যের ভেতর দেখেছি। কিন্তু এর সঠিক অর্থ কী, আমি জানি না। জানতেও চাইনি কখনও। তবে বুঝতে পারছি, এগুলো এক ধরনের গালিগালাজ।
এই আলোচনায় অনেকেই ব্যক্তি মোস্তফা জব্বারকে এই শব্দগুলো ব্যবহার করে গালিগালাজ করে থাকেন। ধরে নিচ্ছি তারা বয়সে তরুণ। কিন্তু একটি বিষয় আমার মাথায় কিছুতেই ঢোকে না যে, এমন গালিগালাজের প্রথা আমাদের ভেতর চালু হলো কিভাবে? নাকি বাঙ্গালী বরাবরই এমন ছিল; এখন তার চরিত্র ফুটে উঠেছে? একজন মানুষকে গালি দেয়ার আগে, আমরা একটি বারও ভাবি না যে, একই গালিটি খেলে নিজের কেমন লাগবে! কিংবা, আমি ওই গালিটি দিতে গিয়ে নিজেকে কোথায় নামিয়ে আনলাম। আমি অনেক শিক্ষিত মানুষকে (এমনকি পিএইচডি করেছেন) দেখেছি, ফেসবুকে এই শব্দগুলো ব্যবহার করে গালি দিতে।
এই গালি দেয়ার প্রথা নিশ্চই আমরা কোনওভাবে চালু করেছি এবং উৎসাহিত করেছি। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আজ যারা এভাবে গালি দিচ্ছেন, তাদেরকেও পরের জেনারেশন আরো খারাপ ভাষায় গালি দেবে। এটাই প্রকৃতির ধর্ম। এটা দেখার জন্য আমার অপেক্ষা না করলেও চলবে। এটা হবেই।
প্রতিটি রাষ্ট্র, সমাজ তার নিজেই মতোই মানুষ পায়। আমরা যেহেতু গালিগালাজের সমাজ তৈরী করেছি, তাই আমাদের আউটপুট-ও তেমন হবে। এই দেশে ভদ্র যোগ্য মানুষরা বসবাস করবে না। তারা তো দেখছে, একজন সিনিয়র মানুষকে আমরা কিভাবে নিত্যদিন অপমান করছি। এই ফলাফল দেখার পর, এই পথে আর কেউ হাটতে চাইবে না। যেই পাপ্পানা মাইক্রোসফটে চলে গেছে (এবং তা নিয়ে আমাদের কত গর্ব), সেই পথ ধরে অসংখ্য পাপ্পানা দেশ ছেড়ে চলে গেছে, এবং আরো যাবে। তারা আর কখনই এই দেশে ফেরত আসবে না। এটাই বাস্তবতা। আজ প্রতিটি পরিবার চাইছে, তাদের সন্তানরা বিদেশে চলে যাক। এই চাওয়াটুকু কি শখের? তাতো নয়। বাংলাদেশের সবচে ভালো ছেলেমেয়েগুলোকে এখন টার্গেট করেছে গুগল, ইয়াহু, ফেসবুক আর অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান। আমরাও তাদের হাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের তুলে দিয়ে গর্ব বোধ করছি। বুয়েট গর্ব করে বলে, আমাদের ক্যাম্পাস থেকে এতোজন ছাত্রছাত্রী গুগলে গিয়েছে। তারা স্থানীয় কোনও প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারে না। কারন, তেমন কোনও প্রতিষ্ঠান নেই। আমরা প্রতিষ্ঠান তৈরীতে বাঁধা দিয়েছি (আমরা সবাই যদি বিজয় কিনে ব্যবহার করতাম, তাহলে বাংলাদেশে কি একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান তৈরী হতো না?)। আর ওদিকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের ব্রেইন ব্যবহার করে আরো শক্তিশালী হবে। তারা নতুন নতুন পণ্য তৈরী করবে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে তেমন কোনও পণ্য তৈরী হবে কি না, তা বোঝার জন্য গবেষণার প্রয়োজন নেই।
অনেকেই ভাবতে পারেন, আমি মোস্তফা জব্বারের পক্ষে কথা বলছি। বিষয়টি তা নয়। এই দেশে যদি দেখতাম মোস্তফা জব্বারের সাথে পরের জেনারেশনের অভ্র টিমের মেহ্‌দী হাসান খানদের ভালো সম্পর্ক, একটা দেয়া নেয়া শেখার সম্পর্ক, একটা আদান প্রদানের সুসম্পর্ক, এক জেনারেশনের সাথে পরের জেনারেশনের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার সম্পর্ক - তাহলে বুঝতাম আমরা সঠিক পথে এগুচ্ছি। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির চুল-পাকা উদ্যোক্তাদের দেখেছি, কিভাবে তারা একে অপরকে সাহায্য করে, একটি নতুন পণ্য তৈরীর জন্য দিনের পর দিন কিভাবে এক ফ্লোরে বসে কাজ করে। আমাদের মধ্যে সেই বন্ধন নেই বললেই চলে। আমরা কারো সাথে দ্বিমত পোষণ করি তো, তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ি। গালিগালাজ আর কাঁদা ছুড়াছুড়ির সমাজে ভালো কিছু হতে পারে না। এমন কোনও উদাহরণ এই গ্রহে নেই।

প্রশ্ন ১০: বাংলাদেশে তেমন কোনও সফটওয়্যার পণ্য নেই কেন?

জাকারিয়া স্বপন: এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ মন্তব্য করেন বটে। কিন্তু খুব একটা আলোচনা হয় না। বাংলাদেশে এখন বড় ধরনের বিপ্লব চলছে - চাকুরি করবো না, চাকুরি দিবো। আমরা সবাইকে উদ্যোক্তা বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি।
আমি মনে করি, এভাবে জোর করে উদ্যোক্তা তৈরী করা যায় না। যার ভেতরে উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মসলা থাকবে, তিনি নিজের টানেই তা হয়ে যাবেন। বরং আমরা শিখাতে পারতাম, কিভাবে ভালো স্টাফ হওয়া যায়, কিভাবে ভালো প্রফেশনাল হওয়া যায় - যা বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ জানে না। আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে তো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বিশেষ করে ইথিক্স, প্র্যাকটিস, সিনসিয়ারিটি, কপিরাইট, ইত্যাদি বিষয়গুলোতে। যেকারণে, বাংলাদেশের অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান ভারতের প্রফেশনালদেরকে এনে চাকুরি দিচ্ছেন। বাংলাদেশের বড় সংকট এখন এটাই।
এবং যেহেতু ভালো প্রফেশনাল নাই, তাই এদেশে নিজেদের পণ্য নেই বললেই চলে। এই বিজয়, অভ্র এবং গুটি কয়েক সফটওয়্যার ছাড়া বাংলাদেশের আরো কী সফটওয়্যার আছে কেউ আমাকে বলবেন? আসলে পণ্য তৈরী করা একটি পুরো ভিন্ন বিষয়। প্রডাক্ট ভিন্ন জিনিস। ভালো প্রোগ্রামার হলেই ভালো প্রডাক্ট তৈরী হয়ে যাবে তা বলা যাবে না। যদি তাই হতো, তাহলো তো আমরা অনেক প্রডাক্ট দেখতাম। অনেক অ্যাপস, গেম, সফটওয়্যার, সিস্টেম, সলিউশন - কয়টা আছে আমাদের? গত ২৫ বছরের কম্পিউটার জীবনে কতগুলো প্রডাক্ট পেয়েছে এই দেশ? আমরা বিদেশ থেকে পন্য এনে এখানে বিক্রি করতে জানি। কিন্তু সেই পণ্য তৈরী করা - অনেক দূরের বিষয়।

প্রশ্ন ১১: বিজয় ন্যাশনাল ডাটাবেস কাজের জন‌্য ৫ কোটি টাকা ছিল। অভ্র সেটা বিনামূল্যে করে দিয়েছিল।

জাকারিয়া স্বপন: যে যার প্রডাক্ট বিক্রি করতে চাইবে, এটাই তো স্বাভাবিক - সেটা ৫ কোটি হোক, না ৫০০ কোটি হোক। নির্বাচন কমিশন সেই অফার নেয়নি। ব্যাস। অপরদিকে অভ্র বিনা-মুল্যে কাজটি করে দিয়েছিল। অভ্র টিম নিঃসন্দেহে একটি বিশাল কাজ করে দিয়েছে। আবার বিনামূল্যে সবাইকে বাংলা লিখতে দেয়ার সিস্টেম করে দেয়ায়, তারা আরো বেশি ক্রেডিট পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, অভ্র অন‌্যের কোনও জিনিস বিনামূল্যে তাদের প‌্যাকেজের সাথে দিয়ে দিতে পারে। এটা কপিরাইটের ব্যত্যয়। অভ্র সেখানে বিজয় কী-বোর্ড দিয়ে সেই সমাধান করে দিয়েছিল। অভ্রের উচিৎ ছিল তার নিজের কী-বোর্ড দেয়া। অন্যের জিনিস বিনামূল্যে আপনি দেয়ার কে? আপনি কাল মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিংবা ওরাকল কিংবা অ্যাপলের কোনও একটি অ্যাপ একই রকমভাবে বানিয়ে বিনামূল্যে বাজারে ছেড়ে দেখেন তো কী হয়! :-)

প্রশ্ন ১২: এই বাচ্চা ছেলেগুলোকে একটু ছাড় দিলে কী হতো? এটা করে কি তিনি মহান হতে পারতেন না?

জাকারিয়া স্বপন: মোস্তফা জব্বার তার প্রডাক্ট ফ্রি দিবেন, নাকি শত কোটি টাকায় বিক্রি করবেন সেটা তারই সিদ্ধান্ত। আমরা কি স্টিভ জবসকে অনুরোধ করতে পারতাম যে, আপনি আইফোনের দামটা অর্ধেক করে দেন, কারন আপনি অনেক বেশি মুনাফা করছেন? আমাদের সবার ভেতরে কেন যেন একটি বিষয় বিশ্বাসের পর্যায়ে চলে গেছে যে, একটু ছেড়ে দিলেই তো হয়:-) আরে বাবা, আপনি নিজে একটা লিখে তারপর সেটা বিনামূল্যে দিয়ে দেন, কেউ তো আপনাকে বাধা দিচ্ছে না। আমরা কেন অন্যের জিনিস নেওয়ার জন্য এতো মরিয়া হয়ে উঠেছি? আবার সেটা না পেলে তাকে গালমন্দ করছি! এমন উদাহরন কি এই গ্রহে আরো পাওয়া যাবে?
একজন ব্যক্তি মোস্তফা জব্বার কেমন, সেটা তো আলোচ্য বিষয় নয়। তিনি মহান হয়ে মারা যাবেন, নাকি একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে মারা যাবেন - সেটা তার সিদ্ধান্ত। আমরা সেই সিদ্ধান্ত তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি কেন?

প্রশ্ন ১৩: অভ্র/ রিদ্মিক না থাকলে এত বাংলা লেখার বিপ্লব হত না।

জাকারিয়া স্বপন: অবশ্যই হতো না। তারা খুবই ভালো একটি কাজ করেছেন। তাদের কাজকে কেউ খাটো করছে না। এবং তাদেরকে কেউ বাধাও দিচ্ছে না। অভ্র/রিদ্মিকের উচিৎ ছিল নিজেদের মতো আগানো। এভাবে অনুমতি ছাড়া অন্যের কী-বোর্ড (যা নিয়ে এতো বিতর্ক হয়েছে) নিয়ে বিপ্লব ঘটানোর আগে আরো চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল।
একটি উদাহরন দেই। একটি ওয়েবসাইট চাইলেই সকল বাংলা গান বিনামূল্যে ইন্টারনেটে দিয়ে দিতে পারে। এবং বাংলা সঙ্গীতের একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে। তাহলে সবাই ফ্রি গান ডাউনলোড করে শুনতে পারবে। এটা কি করা যাবে? গানের মালিকরা এটাকে সমর্থন করবে? বিপ্লব তো হতে পারতো :-)

উপসংহার:

আমি চেষ্টা করেছি, এই বিতর্ককে ঘিরে যে প্রশ্নগুলোকে ঘুরপাক খেতে দেখেছি, সেগুলোর উত্তর কম্পাইল করতে। এর বাইরেও হয়তো অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। যদি কেউ সেটা করতে পারেন, তাহলে এখানে সংযোজিত করে দেয়ার চেষ্টা করতে পারি। আমি জানি, তাতেও অনেকের মনের ভেতর আরো হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাবে। কিছু মানুষ সারাটা জীবন এভাবেই কাটিয়ে দেবেন - তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো আর কখনই পাল্টাবার নয়। কারণ, তারা অনেক বেশি স্মার্ট। অন্তত নিজেরা তাই মনে করেন নিশ্চই :-)
গালি দিতে পারাটাই তো স্মার্টনেস, তাই না?
কৃতজ্ঞতা: হাসিন হায়দার, রাসেল আব্দুল্লাহ আল মামুন
সুত্র ;priyo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Emoticon
:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top