♥♥♥ ভালোবেসে পাহাড় কেটে ছয় হাজার সিঁড়ি নির্মাণ, যে কোন রোমান্টিক গল্পকেও হার মানাবে এ জীবনের কাহিনীটি ♥♥
লিউ জুজিয়াং তখন ১৯ বছরের টগবগে সুদর্শন এক তরুণ। খোশমেজাজি, সদালাপি। হুট করে প্রেমে পড়লেন তাঁর চেয়ে ১০ বছরের বড় স্বামীহারা , এক সন্তানের জননি সু চাওকিনের।
সে আজ থেকে ৫০ বছর আগের কথা। আজকের তুলনায় তখনকার চীন ছিল আরও রক্ষণশীল। প্রথমত বয়সে বড় কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়া ছিল অনৈতিক ও নিষিদ্ধ। সেই নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ডিঙিয়ে জুজিয়াং হাত ধরলেন সু চাওকিনের।
জুজিয়াংয়ের ভালোবাসা নিয়ে চারদিকে শুরু হলো টিটকারি। স্ত্রীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আর সইতে পারছিলেন না। “নাহ, এখানে আর নয়”-ভাবলেন জুজিয়াং। চলে গেলেন মনুষ্য সমাজের বাইরে, দূর পাহাড়ে।
জিয়াংজিন প্রদেশের অনেক গভীরে পাহাড়ের গায়ে এক চিলতে গুহাকে ঠিক করলে বাসস্থান হিসাবে। আশপাশের কয়েক মাইলের মধ্যে জনমানবের চিহ্ন নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলল, কিন্তু খাবার নেই, কাপড় নেই। আছে শুধু ভালোবাসা, আর এর শক্তি। রাত হলেই নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার।তবে সব ছাপিয়ে, ভালোবাসা দিয়েই জয় করলেন সব।

সবকিছুর চেয়ে জুজিয়াং বেশি কষ্ট পাচ্ছিলেন স্ত্রীর কষ্ট দেখে। পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উঠতে-নামতে কষ্ট হয় চাওকিনের। একদিন হাতে বানানো হাতুড়ি-বাটাল, কোদাল নিয়ে চলে গেলেন বাড়ির কাছাকাছি ঢালটায়। নেমে পড়লেন পাহাড়ি ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজে। একটু জায়গা পরিষ্কার করতেই অর্ধেক দিন চলে গেল। বাকি অর্ধেক দিনে দুটো সিঁড়ির ধাপ বানাতে পারলেন। সেই থেকে শুরু।
প্রতিদিন কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই জুজিয়াং চলে যেতেন পাহাড়ের ঢালে। নিবিষ্টমনে সিঁড়ি বানাতেন।তবে কোনদিনই এটা প্রিয়তমাকে জানতে দেন নি তিনি। স্ত্রী তাঁর কোমল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামবেন, আর তিনি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখবেন। এমন স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতেন মানুষটি। দিন যায়, মাস যায়, যায় বছরের পর বছর। জুজিয়াংয়ের সিঁড়ি বানানো তবু শেষ হয় না। স্ত্রী কতবার বারণ করেছেন। কিন্তু জুজিয়াংয়ের ওই এক পাগলামো। পাহাড়ের পাদদেশ অবধি সিঁড়ি তিনি বানিয়েই ছাড়বেন।সময় গড়িয়ে যায়, কিন্তু জুজিয়াংয়ের সিঁড়ি বানানো শেষ হয় না। দীর্ঘ ৫০ বছর পর ২০০১ সালে শেষ হলো জুজিয়াংয়ের সিঁড়ি বানানো। স্ত্রীকে ডেকে এনে অবাক করে দেন লিউ। নিজেকে তাঁর মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। গুনে দেখা গেল, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি ধাপ হয়ে গেছে।
সেই বছরই একদল অভিযাত্রী বেড়াতে এলেন ওই এলাকায়। গহীন অরণ্যে মানুষের হাতে গড়া সিঁড়িটা তাঁদের নজর এড়াল না। খোঁজ করতে গিয়ে বেরিয়ে এল সব তথ্য। লিউ দম্পতির সাত সন্তানের একজন জানালেন, ‘বাবা-মা একটি দিনের জন্য একে অন্যকে চোখের আড়াল হতে দেননি। মা খুব একটা নিচে না নামলেও বাবা নিজ হাতে তৈরি করেছেন সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ।’ জানাজানি হওয়ার পর তাঁদের নিয়ে তৈরি হলো প্রামাণ্যচিত্র। স্থানীয় সরকার সিঁড়িটি সংরক্ষণ করার ঘোষণা দিল। ২০০৬ সালে চায়নিজ উইমেন উইকলির সেরা ১০ ভালোবাসার গল্পে স্থান পেল লিউ-জুর কাহিনী। প্রকাশ করে।
এক বছর পরের কথা। জুজিয়াংয়ের বয়স তখন ৭২/ হঠাত্ একদিন বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। স্ত্রীকে কাছে ডাকলেন। হাতখানা মুঠোয় পুরে গাঢ় দৃষ্টিতে স্ত্রীর চোখে চোখ রাখলেন। বললেন, ‘চললাম। ভালো থেকো।’ সূর্য তখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়েছে। চাওকিন অশ্রুসজল চোখে স্বামীর প্রতি অভিযোগ তোলেন, ‘তুমি বলেছিলে সব সময় আমার পাশে থাকবে। কিন্তু তুমি কথা রাখবে না কেন! এখন আমি একা একা কী করে থাকি!’ আমার জীবনে পাই নাই কাওকে তার জন্য আমি এমন করবো । জানি না পাব কি না কোনদিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.