GuidePedia

0
ভালবাসা শব্দটি গভীর রহস্যময়
ভালবাসা শব্দটি গভীর রহস্যময় আর দারণ উপভোগ্য রোমাঞ্চকর। ভালবাসা মানুষের জীবনবোধের এক সম্ভবহীন নান্দনিক প্রত্যয় বলা যায়। আজ (৩য় পাতায় দেখুন) বিশ্ব ভালবাসা দিবস। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে। বিশ্বের প্রেম পিয়াসী যুগলরা বছরের এই দিনকেই হৃদয়ের অনুভূতির আবেগে বেছে নিয়েছে হৃদয়ের ফুল ফুটাতে। আজ হৃদয়ের গহীন অরণ্যে ফুটবে ভালবাসার কাঙ্খিত ফুল। বেজে উঠবে হৃদয়ে কবিতার সুর। ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ হয়ে দিন কাটবে সকল প্রেমপিয়াসীদের। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি একজন তরুণ চিকিৎসক ও খ্রীষ্টান ধর্মযাজক। একদিন রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের বিরোধীতা করায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগার কার ভাল লাগে বলেন? ভ্যালেন্টাইনের কাছে তো তা ছিল খুব বিরক্তিকর। ঠিক এমন সময় জেল সুপারের এক কন্যা ভ্যালেন্টাইনের কাছে আসল। ভ্যালেন্টাইনের চোখে ছড়িয়ে দিলেন ভালবাসার আলোর পশলা। ভ্যালেন্টাইনের অনুভূতি জেগে উঠল। তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। জেল সুপারের কন্যাও তাকিয়ে কী যেন দেখতে লাগলেন। কী যে অনুভূতি! কিন্তু এক পর্যায়ে বিচারে অভিযুক্ত হলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তাকে দেয়া হল ফাঁসি। দিনটি ছিল ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যুর আগে ভ্যালেন্টাইন তার প্রিয়তমাকে লেখেন একটি চিঠি। চিঠিতে স্বাক্ষর করে লেখেন এর পর থেকে সময় যেতে থাকে। ৪৯৬ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন রোমের রাজা পপ জেলাসিয়াস এই দিনটিকে প্রথম স্বীকৃতি দেন ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস। পৃথিবীর অসংখ্য নারী পুরুষের কাছে এই ১৪ ফেব্রুয়ারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মৃতি বিজড়িত বিশেষ এক দিন ভালবাসা দিবস। মাত্র ২৪ ঘন্টার ফ্রেমে কি ভালবাসাকে বেঁধে ফেলা যায়? ভালবাসা তো একটা সতত প্রবাহমান স্রোতস্বিনী। এর মধ্যে আছে ঝড়ঝঞ্ঝা, চড়া উৎড়াই আর রহস্যময় চোরাবালি। ভালবাসা কারো কাছে চির সবুজের এক অশেষ সীমনা। ভালবাসার কতরকম যে অভিব্যক্তি! ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃষ্ণ, চন্ডিদাস-রজকিনী, হেলেন-প্যারিস, লাইলী-মজনু, অর্ফিউস-ইউরিদাইস, শিরি-ফরহাদ, ক্লিউপেট্টা-এন্থনি, রোমিও-জুলিয়েট, শাহজাহান-মমতাজ, বেহুলা-লখিন্দর প্রমুখেরা তো ভালবাসার ইতিহাসে কিংবদন্তি। সত্যি কথা বলতে কি, ভালবাসা মানে না জাত বেজাত, জাতি ধর্ম বর্ণ কোন বাঁধা। এর কাছে তুচ্ছ সব সামাজিক ধর্মীয় বিধি-বিধান। তাইতো ভালবাসার আগুনে পুড়ে হৃদয় হয় খাঁটি সোনা। ভ্যালেন্টাইন ডে- শুধু কি একদিনের ভালবাসা? শুধু কি প্রেমিক প্রেমিকার মিলনেই? নিশ্চয়ই তা নয়। ভালবাসাকে গভীর করতে দিবসকে স্তম্ভ মনে করতে পারি। যে দিবসে আমরা শপথ নেই পরস্পরকে শর্তহীন ভালবাসার। আজকের এ পৃথিবী বড়ই নির্দয়, কলুষিত ও ভালবাসাহীন। চারদিকে শুধু ভালবাসাহীনতার বিষবাষ্প, নোংরামী আর প্রতারণা। ভালবাসায় অবশ্যই ধর্মের, সমাজের স্বীকৃতি থাকতে হবে। তা না হলে ইহা নোংরামী বলেই স্বীকৃত হয়ে থাকবে। আমি জানি ভালবাসার শক্তির কাছে তুচ্ছ সব কিছু। ভালবাসাকে একদিনের ফ্রেমে বন্দী না রেখে এর রেশ ধরে রাখতে হবে সারা বছর সমাজে পরিবারে সবার সাথে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দেখা যাচ্ছে আধুনিকতার নামে বিশেষ করে বড় বড় শহর গুলোতে তরুণ তরুণীদের বেশ উন্মাদনা। গোপনে প্রকাশ্যে যা করছে তারা, একে অনেকেই নোংরামী আখ্যায়িত করছেন। আবার একটি মহল তাতে সায়ও দিচ্ছেন। আজকের এই দিনে শিক্ষাবিদ, গণমান্য ব্যক্তিবর্গ, ছাত্রছাত্রী ও কয়েকজন তরুণ তরুণীর অভিমত নিয়ে সাজানো হল আজকের বিশেষ প্রতিবেদন। মোঃ নজীবর রহমান, প্রভাষক ইতিহাস বিভাগ শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ঃ আসলে প্রেমিক প্রেমিকার মাধ্যমেই এ দিবসটির সৃষ্টি। কিন্তু অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেকই জানেনা। যে কারণে ভুল পথে না জেনেই ভালবাসার ছদ্মাবরনে ভালবাসার ক্ষতি সাধন বা ভালবাসার নামে নোংরামী করা হচ্ছে। ভালবাসা হচ্ছে বিশ্বাস ও আন্তরিকতা। ভালবাসা মা বাবা সহ সবার জন্যই। মোঃ ইসহাক মিয়া, প্রধান শিক্ষক ডিএনআই, বাহুবল ঃ আসলে বিশ্ব ভালবাসা দিবস ইউরোপ আমেরিকার সাংস্কৃতিক পালন করা হচ্ছে। ভালবাসা একটি সার্বজনীন শব্দ। গুরুত্ব না জানলে ভালর চেয়ে মন্দই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। ভালবাসা সবার সাথেই হতে পারে এবং হতে হবে। দিবস পালন করা যায়। তবে ভাল দিক গ্রহণ ও মন্দ দিক পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন ভালবাসা দিবস উপলক্ষে আপনার মা বাবার জন্য কিছু উপহার কিনে নিয়ে যান, দেখবে ভালবাসা দিবসের তাৎপর্য বয়ে আনবে। মোঃ আব্দুল হান্নান সরকার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, বাহুবল ঃ সবাই সবাইকে ভালবাসতে পারে। তরুণ তরুণীর মাঝেও ভালবাসার বন্ধন তৈরী হওয়া নিন্দনী নয়। তবে এর আদলে যদি নোংরামীতে রূপ নেয় তবে তা পরিত্যাজ্য। সমাজ ও পরিবারের সমর্থন নেই এমন ভালবাসা (!) থেকে বিরত থাকা উচিৎ। ফখরুল ইসলাম মামুন বিএ অনার্স, সহ:শিক্ষক গাজীপুর চুনারুঘাট ঃ শুধু যুবক যুবতীর মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কই ভালবাসা নয়। ভালবাসা একটি ব্যাপক বিষয় যা সবার জন্য প্রযোজ্য। পার্কে বসে আড্ডা, লেকে গিয়ে যুবক যুবতীর ভ্রমণ তা ভালবাসার সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ নয়। এসব পছন্দ করি না। কামরুল হাসান সাংবাদিক শায়েস্তাগঞ্জ ঃ ভালবাসার দিবস পালন আমি আদৌ পছন্দ করি না। এগুলো হচ্ছে একটা নোংরামীর আয়োজন। মোঃ শহীদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক বাহুবল উপজেলা প্রাঃ শিক্ষক সমিতি ঃ প্রেম ভালবাসার কোন স্তর নেই। যে কোন বয়সেই প্রেম ভালবাসা আসতে পারে। তবে তা যেন হয় সৎ এবং স্বচ্ছ। বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসেবে ভাল ভেবে নিলে তা ভাল হবে। দিলরুবা ইয়াছমিন নূপুর, শিক্ষার্থী বিএ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ হবিগঞ্জ ঃ ভালবাসা ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু কোন অবস্থায়ই ধর্ম ও সমাজ গ্রহণ করে না এমন কার্যকলাপ আমি মোটেও লাইক করি না। কোন কিছু পালন করলে যদি ভাল কিছু সৃষ্টি হয় তবে তা করা যায়, নইলে পালন না করাই শ্রেয়। শারমীন আক্তার রিয়েল, হবিগঞ্জ ল’ কলেজ ঃ বর্তমানে তরুণ তরুণীর মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কই আমরা ভালবাসা মনে করি। এটা ঠিক না। ইহা শ্বশ্বত সার্বজনীন, এর ব্যাপ্তি অনেক। ভালবাসা মানে প্রেমিক প্রেমিকার মিলনই নয়। তরুণ তরুণীর মাঝে উন্মাদনা তো ভালবাসা নয়, ইহা গর্হিত কাজ। এ দিবসের উৎস স্থল রোমের ভ্যালেন্টাইনও কিন্তু এমন গর্হিত কাজ করেননি। অনেকে প্রেম ভালবাসাকে এদের মাঝে আটকে ফেলেছেন। সবার ভালবাসাই সবার জন্য থাকা উচিৎ। পারিবারিক পরিমন্ডলে ভালবাসা দিবস পালন করা যেতে পারে। এর বাইরে পছন্দ করি না। মোঃ মাসুদ মিয়া, প্রভাষক গাজীপুর স্কুল এন্ড কলেজ, চুনারুঘাট ঃ খড়াব ভড়ৎ ধষষ- ভালবাসা সবার জন্য। ধর্ম বর্ণ বা গোত্রে ভালবাসা সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনা। তবে নৈতিক অবক্ষয় হয় এমন সম্পর্ক ভালাসার আওতায় নয়। লিয়াকত আলী বিএ, গাজীপুর ঃ ভালবাসা তো ভাল। তবে পর যুবত যুবতীদের মাঝে ভালবাসার নামে যেসব অনৈতিক কার্যকলাপ হয় তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। বরং ঘৃণিত এবং ঘৃণা করা উচিৎ। ভালবাসা সব মানুষকেই বিলিয়ে দেয়ার বিষয়। আল মামুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী নবীগঞ্জ ঃ ভালবাসার আবার দিবস কিসের? আমি এসব নোংরামী পছন্দ করি না। মিনারা খাতুন, প্র.শি রামপুর গভঃ প্রাইমারী স্কুল, বাহুবল ঃ ভালবাসার কোন দিন মাস বছর নেই, এর কোন পরিমাপ নেই। কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোন ভালবাসা হয় না। ভালবাসা প্রাকৃতিক নিয়মেই আসে। ভালবাসার নামে অশ্লীলতা সমর্থন করা যায় না। জেসমিন আক্তার, শিক্ষার্থী মাধবপুর কলেজ ঃ প্রেম বা ভালবাসা সবার মাঝেই আছে। কামভাব ভালবাসার লক্ষণ নয়। ভালবাসার
সম্পর্কের কারণে অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি করা এটাতো প্রেম নয় নোংরামী। আব্দুর রউফ, সহঃ শিক্ষক, এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বানিয়াচং ঃ প্রেম ও ভালবাসা এক নয়। ভালবাসা সবার জন্যই। প্রেম একটি শ্রেণীর মাঝেই গড়ে উঠে। তবে প্রেমের নামে অনৈতিকতা নিন্দনীয়। শর্ব্বানী দত্ত, সহঃশিক্ষিকা লামাতাশী গভঃ প্রাইমারী স্কুল বাহুবল ঃ প্রেম ভালাবাসা দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। মা বাবা সহ সব মানুষের মাঝেই পারস্পরিক ভালবাসা থাকতে হবে। আবার তরুণ তরুণীর মাঝে যে সম্পর্ক গড়ে উঠে তা এক অন্য রকম ভালবাসা। ইহা মনের এক অনুভূতি থেকে সৃষ্টি। প্রেম যে কারো সাথে গড়ে উঠতেই পারে। এতে বয়স, স্থান কাল জাতি ধর্ম বর্ণ কোন ভেদাভেদ নেই। প্রেম স্বর্গীয়। মোঃ মুশাহিদ আলী, প্র.শি বাহুবল মডেল প্রাঃ স্কুল ঃ ভালবাসার দিবস টিবস আমি পছন্দ করি না। ইহার উদ্দেশ্য ভালর চেয়ে খারাপ বেশি। এই প্রবণতা সমাজকে কলুষিত করে। তা বন্ধ করা উচিৎ। পিয়ারা খাতুন, সহঃ শিক্ষিকা বড়গাঁও স্কুল ঃ ভালবাসা সবার প্রতি সুসম্পর্কই ভালবাসা। আর তরুণ তরুণীর মাঝে বিদ্যমান সম্পর্ক ইহা ব্যাক্তিগত ভালবাসা। ইমরান আহমেদ দৈনিক লোকালয় বার্তা ঃ আমি ভালবাসা পচন্দ করি, কারন ভালবাসা একে অন্যের হিংসা বিদ্ধেষ দুর করে পরষ্পর ভ্রাতৃত্ব ঘটায়, তাই আমার মতে ভালবাসা পচন্দ করা দোষের কিছু নেই। এবারের বিশ্ব ভালবাসা দিবস বয়ে আনুক গরীব অসহায় সহ সকল মানুষ ও মানবতার জন্য ভালবাসা। দূর হোক সকল প্রকার নোংরামী। ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top