GuidePedia

0
৪৪০০ বছরের প্রাচীন এক ভালোবাসার গল্প!
ভালোবাসার কাহিনী/ভালোবাসার কাহিনী/ভালোবাসার কাহিনী/ভালোবাসার কাহিনী/ভালোবাসার কাহিনী/ভালোবাসার কাহিনী/

মেয়েটি ছিল একজন পুরোহিত, নাম মেরেটাইটস। ছেলেটি ছিল একজন গায়ক যে মিশরের ফারাওয়ের প্রাসাদে সংগীত পরিবেশন করতো, নাম কাহাই। তাঁরা প্রায় ৪৪০০ বছর আগে জীবিত ছিলেন যখন মিশরে পিরামিড তৈরি হচ্ছিলো। আর এ দু’জনের ভালোবাসার দৃশ্য অঙ্কিত হয়ে রয়েছে খুব অস্বাভাবিক এক স্থানে। তাঁদের সমাধিক্ষেত্রে! সাকারার সমাধিক্ষেত্রে এই দুইজন ও তাঁদের বংশধররা শায়িত আছেন চিরনিদ্রায়। আর এই সমাধিক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করছেন Macquarie Universityর Australian Center for Egyptologyর গবেষকরা। আর ভালোবাসা প্রকাশক এই দেয়ালচিত্রে দেখা যায়, মেরেটাইটস ও কাহাই একে অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেরেটাইটসের ডান হাত কাহাইয়ের ডান কাঁধে ছিল।
ভালোবাসার কাহিনী
মিশরের পিরামিড যুগে এধরণের ভালোবাসার প্রকাশ বেশ বিরলই বটে। এই চিত্রটিসহ সমাধিক্ষেত্রের আরো বেশকিছু চিত্রকর্ম থেকে এটা বোঝা যায়, পিরামিড যুগে মিশরের নারীরা পুরুষদের সাথে সমানাধিকার ও একই ধরণের সম্মানের অধিকারী ছিল। গবেষক মিরাল লেসিয়েন বলেন, “কাহাইয়ের এই সমাধি সেযুগে নারীদের বিশেষ অবস্থানের একটি গুরত্বপূর্ণ নিদর্শন। বিভিন্ন চিত্রে পুরুষদের সাথে নারীদের সহাবস্থান, স্বামী ও ভাইদের সমাধির আকৃতির সাথে তাঁদের সমাধির আকৃতির মিল-সেযুগের সমাজে নারীদের সম-অধিকারকেই তুলে ধরে।”

ছবিতে দেখা যায়, কাহাই একটি পরচুলা পরে আছেন, কাঁধে রয়েছে একটি গলাবন্ধনী, হাতে রয়েছে ব্রেসলেট ও গায়ে ছিল চিতাবাঘের চামড়া। এছাড়া তাঁর হাতে শোভা পাচ্ছিল রাজদণ্ড, যেটি ছিল কর্তৃত্ব ও দায়বদ্ধতার প্রতীক। এটি খুব সম্ভবত কাহাইয়ের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি হওয়ার নিদর্শন। মেরেটাইটসের পরচুলা ছিল অনেক লম্বা, পরনে ছিল লম্বা গাউন, ব্রেসলেট ও বড় গলাবন্ধনী।
সমাধিটি ১৯৬৬ সালে আবিষ্কৃত হয় ও সাদা-কালো ছবিসহ এর বর্ণনা ১৯৭১সালে একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়। ২০১০ সালে গবেষকরা আবারো আরো বিস্তারিত গবেষণার উদ্দেশ্যে এই সমাধিক্ষেত্রে ফিরে আসেন। সমাধিটি প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের সবচেয়ে রঙিন স্থাপত্যগুলোর একটি। সম্প্রতি লেসিয়েনের এ সংক্রান্ত বই “The Chapel of Kahai and his Family” প্রকাশিত হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক ও অন্যান্য শিল্প নিদর্শন দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটি রাজা নিউসেরের (২৪২০-২৩৮৯ খ্রিস্টপূর্ব) শাসনামলে নির্মিত।

কাহাই ও তাঁর ছেলেরা গায়ক হিসেবেই কাজ করতেন। আর তাদের সমাধির সুন্দর বিন্যাস ও গঠনশৈলী দেখা বোঝা যায়, তাঁরা আসলে রাজকীয় গায়ক ছিলেন। গান গাওয়ার সাথে সাথে কাহাই খুব সম্ভবত প্রাশাসনিক কাজেও নিযুক্ত ছিলেন। দৃশ্যত কাহাইয়ের কর্মজীবন বেশ সাফল্যমণ্ডিতই ছিল। কিন্তু তাঁর জীবনেও কিছু বেদনাবিধূর ঘটনা ছিল। সমাধির শিলালিপি থেকে জানা গেল, কাহাইকে তাঁর একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে নেফেরকে সমাধিস্থ করতে হয়েছিল। নেফেরের স্ত্রী তাঁর মৃত্যুর সময় সন্তানসম্ভবা ছিলেন। যাই হোক, সমাধিগুলোতে প্রাচীন মিশরীয় রীতি অনুযায়ী জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে দেয়া হত, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল এগুলো তাদের পরজন্মে কাজে দিবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top