GuidePedia

0
প্রযুক্তির বিবর্তনের আশীর্বাদে এখন ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে অনেক তথ্য জানতে পারছি আমরা। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং কম্পিউটার মডেলের কল্যাণে ঘূর্ণিঝড়ের ভেতরে কি চলছে তা ও আমরা জানতে পারি। এসবের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতিও হয়ে উঠেছে অনেক উন্নত। বিষুবীয় একটা ঘূর্ণিঝড় কোন পথে যাচ্ছে তা ও আমরা এখন বুঝতে পারি। কিন্তু কোনও একটি স্থানে পৌঁছে এই ঘূর্ণিঝড়টি কতটা শক্তিশালী হবে সে ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে রয়ে গেছি আমরা।

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিতে ব্যবহৃত হয় বেশ কয়েকটি কম্পিউটার মডেল। এদের একেকটির ক্ষমতার মাঝে রয়েছে বেশ ফারাক এবং একেকটি একেক বিষয়ে পারদর্শী। “এটা একটা সাধারণ অঙ্কের প্রশ্ন নয় যে আপনি বলবেন এক্স এর মান বের করলেই উত্তর পাওয়া যাবে,” বলেন NOAA এর ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ জন কাঞ্জিয়ালোসি। “অনেকগুলো অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আমাদের চলতে হয়। এর কোনও সঠিক উত্তর নেই”।

বর্তমানে প্রচলিত মডেলগুলো ঘূর্ণিঝড়ের চলার পথের পূর্বাভাস দিতে পারে সঠিকভাবেই। এর জন্য ব্যবহার করা হয় গ্লোবাল ডাইনামিক মডেল। এই মডেলগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাৎক্ষনিকভাবে তথ্য নিয়ে এগুলোকে একটা সমীকরণের মাঝে ফেলা হয় এবং এ থেকে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টি সেখানে গিয়ে পড়ার পর কি তাণ্ডব চালাবে সে সম্পর্কে ভালো কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। যেমন, কোনও একটি ঘূর্ণিঝড় হঠাৎ করে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠলে সেটা জানানো সম্ভব হয় না।

কোনও একটি ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিমাত্রা পরিমাপ করার জন্য আমরা সাধারণত একটু কম আধুনিক, পরিসংখ্যান-ভিত্তিক মডেলগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে থাকি। যে ঝড়টি চলছে তা থেকে তথ্য নিয়ে এটি একটি গড়পড়তা উত্তর দেয়। এ থেক বোঝা যায় না ঠিক ওই ঝড়টি কি করবে। বরং জানা যায়, ওই অবস্থানে এবং বছরের ওই সময়ে এমন যে কোনও ঝড়ের শক্তি কেমন হতে পারে। এই মডেলগুলো সহজে কাজ করে এবং সময়ও কম লাগায়। কিন্তু সমস্যা এখানেই যে এদের পূর্বাভাসগুলো হয় দুর্বল। এ ছাড়া খুব হাই টেক মডেলো আছে এবং এগুলো ব্যবহার করে অনেক অনেক তথ্য কিন্তু ফলশ্রুতিতে এগুলো হয়ে যায় ভীষণ স্লথগতির। একটা ঝড়ের ফলে যখন মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে তখন এতটা সময় আসলে পাওয়া যায় না এবং বাধ্য হয়েই কম সময়ে পূর্বাভাস দিতে হয় গবেষকদের।

এ ছাড়াও, ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা হলো, ঘূর্ণিঝড় ঠিক কি ভাবে কাজ করে তা এখনও আমাদের কাছে রহস্য। এদেরকে বহুকাল ধরে পর্যবেক্ষণের পরেও সঠিক কার্যকারণ এখনও আমাদের কাছে রয়ে গেছে অজানা। যেমন আমরা জানি যে ঘূর্ণিঝড়ের ঠিক মাঝে রয়েছে এর কেন্দ্র বা “চোখ” এবং ঘূর্ণিঝড় যখন তাণ্ডব চালাচ্ছে চারিদিকে তখন এই চোখের ভেতরের স্থান থাকে আশ্চর্য রকমের শান্ত। কিন্তু সম্প্রতিই জানা গেছে যে, এই চোখকে বাইরের অশান্ত পরিবেশ থেকে রক্ষা করে যেই বাতাসের দেয়াল তা নিরবিচ্ছিন্ন নয় এবং এটি ভেঙ্গে গিয়ে মুহূর্তের মাঝেই আবার নতুন করে গঠিত হতে পারে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তির ওপরে। এই ঘটনাটি কখনো ঘূর্ণিঝড়কে করে ফেলে দুর্বল আবার কখন তাকে করে তলে আরও বিধ্বংসী। এই রকমের আকস্মিক বিষয়গুলোকে মডেলের ভেতরে আনা সম্ভব নয় এবং এগুলোর ফলে সৃষ্ট তারতম্যও তাই রয়ে যায় হিসেবের বাইরে। এসব কারণে শত হিসেব নিকেশ সত্ত্বেও দেখা যায় পূর্বাভাসগুলো অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে যায় ভুল।

ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আরও ভালো ভাবে বোঝার জন্য তাই মানুষ এবার দূর থেকে জল্পনাকল্পনা বাদ দিয়ে উড়োজাহাজ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিক এর মধ্যভাগে এবং এই কাজগুল আরও ভালোভাবে করা গেলে হয়তো ভবিষ্যতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top