ফেসবুকে কেউ দুঃখী বা অসুখী হতে যুক্ত হয় না। কিন্তু মিশিগান ইউনিভার্সিটির মনোবিদ ইথান ক্রস তার এক গবেষণায় দেখান, ফেসবুক আমাদের কিভাবে দুঃখী করে তুলছে।
ক্রস ও তার সহযোগীরা অ্যান আরবর এলাকার ৮২ জন বাসিন্দার কাছে প্রত্যেক দিন ৫ বার করে খুদেবার্তা আদান-প্রদান করেন। গবেষক দল তাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চান; এই যেমন তাদের অনুভূতির স্বরূপ কেমন, তারা কতটুকু উদ্বিগ্ন, একাকী ইত্যাদি।
দুটি খুদেবার্তার মাঝে তারা কতক্ষণ ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তাও জানতে চাওয়া হয়। ক্রস দেখলেন, দুটি খুদেবার্তার মাঝে যত বেশি ফেসবুক ব্যবহার করা হয়েছে, তত কম সুখী হতে পেরেছে এবং গবেষণার শুরুতে তাদের সন্তুষ্টির/সুখের যে মাত্রা ছিল তা গবেষণার শেষে কম দেখা যায়। তথ্য-উপাত্তগুলোর মাধ্যমে তিনি দেখান যে, ফেসবুক তাদের সত্যিকার অর্থে অসুখী করছে।
ক্রসের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ইন্টারনেটের বিশেষ করে ফেসবুকের বৈরাগী/বিচ্ছিন্নতাবাদী চরিত্র। ১৯৯৮ সালে কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট ক্রাউট দেখান, মানুষ যত বেশি ওয়েব/ইন্টারনেট ব্যবহার করে তত বেশি একাকীত্বে ও হতাশায় ভুগে। মানুষ প্রথমবারের মত অনলাইনে যাওয়ার পর দেখল যে, বছর দুয়েকের মাঝে কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে তার উপর ভিত্তি করে তাদের সুখ বা সামাজিক যুক্ততার অনুভূতির হ্রাস ঘটেছে।
নিসঙ্গ মানুষেরা সাধারণত কমই অনলাইনে যায়। সম্প্রতি প্রায় ৭৫টি গবেষণাতে গবেষকরা দেখান, ‘ফেসবুক ব্যবহারকারী ও না ব্যবহারকারী দুদলেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট প্রায় সমান (গত বছর নাথান হেলার ‘একাকীত্ব’ নিয়ে একটি সাময়িকীতে এ কথাটি বলেন)।’
২০১০ সালে এ রকম ৪০টি গবেষণা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, আমাদের পুরোপুরি ভাল থাকার ওপর ইন্টারনেটের অল্প হলেও ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষণীয়। আরেকটি পরীক্ষায় সিদ্ধান্তে আসে যে, ফেসবুক আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে সমস্যার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে সৃষ্টি করে সন্দেহ ও ঈর্ষা। যতবেশি ফেসবুক ব্যবহার ততবেশি ঈর্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হানা ক্রাসনোভা ও তার সহকর্মীদের মতে, এ প্রভাবের কারণ হচ্ছে সামাজিক তুলনার মনোভাব যা সামাজিক মনোবিজ্ঞানের একটি অতি পরিচিত বিষয়। এটা আরও বেড়ে যায় যাদের সামাজিক নেটওয়ার্ক অভিন্ন। একই শ্রেণী-পেশার বা সমবয়সীদের মাঝে ঈর্ষার পরিমাণ বেড়ে যায় যদি অপরজনের অর্জন বেড়ে যায়।
ফেসবুকের প্রভাব নিয়ে একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় মনোবিজ্ঞানী বেথ অ্যান্ডারসন ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, ফেসবুক ব্যবহার খুব অল্প সময়েই আসক্তিতে রূপ নেয়। অনেকে নেতিবাচক মন নিয়ে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করে আবার বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেয়। আমরা অন্যদের জানতে চাই আবার জানাতেও চাই। কিন্তু এই জানাজানির প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের ও অন্যদের প্রাত্যহিক জীবনকে ঘৃণা করতে শুরু করি।
‘এ রকম হতে পারে যে, মানুষ যে জিনিস খুব পছন্দ করে তা শেষে বিরক্তিকর পরিণত হয়’ মনোবিদ স্যামুয়েল গসলিং নেটওয়ার্কিং ও ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একথা বলেন।
এর বিপরীত কথাও শোনা যায় বিভিন্ন গবেষণায়। ২০০৯ সালে সেবাস্টিয়ান ভ্যালেনজুয়েলা ও তার সহকর্মীরা ইথান ক্রস থেকে ভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তারা বলেন, ‘ফেসবুক আমাদের সুখী করে।’ তারা আরও দেখান, এতে সামাজিক বিশ্বস্ততা ও সম্পৃক্ততা বাড়ে, এমনকি রাজনীতিতে যুক্ত হতেও অনুপ্রাণিত করে।
ভেনিজুয়েলার গবেষণা সামাজিকতা নিয়ে ম্যাথু লিবারম্যান প্রখ্যাত বই ‘সোস্যাল: হোয়াই আওয়ার ব্রেইনস্ আর ওয়ারড্ টু কানেক্ট’ (Social: Why Our Brains are Wired to Connect) এর সঙ্গে মিলে যায়। সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে আমরা আদান-প্রদান করি এবং সফল আদান-প্রদান আমাদের মাঝে মনোজাগতিক ও শারীরিক উদ্দীপনা নিয়ে আসে।
সামাজিক মাধ্যমগুলোর উপস্থিতি আমাদের পড়া ও দেখার প্রক্রিয়াকে একেবারে পাল্টে দিয়েছ। আমরা যখন কোনো কিছু পড়ি বা দেখি তখন আমাদের মাথায় কাজ করে কার সঙ্গে, কিভাবে এটা শেয়ার করব। কোনো একটা বিষয় শেয়ার করার আগেই শুধু শেয়ার করার চিন্তাই আমাদের মস্তিষ্কের পুরস্কার প্রদান কেন্দ্রকে উদ্দীপ্ত করে।
ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ অনেকক্ষেত্রেই আমাদের চাপ ও কষ্ট কমাতে সাহায্য করে। লিবারম্যান ও তার সহকর্মীরা দেখান, দুঃখের সময় ছেলেবন্ধুর হাতের স্পর্শের চেয়ে তার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকা দ্বিগুণ কার্যকর নিয়ামক। দূরত্ব ও কল্পনার মিশেল আমাদের চাপ ও কষ্টের গায়ে শীতলতার প্রলেপ লাগিয়ে দেয়।
মনোবিজ্ঞানী ওয়েন্ডি গার্ডনার ও সিন্ডি পিকেট এটাকে বলেন, ‘সোশ্যাল স্ন্যাকিং’ (social snacking)।
এখন ফেসবুক আমাদের মনের ওপর কি প্রভাব ফেলে এ নিয়ে প্রখ্যাত গবেষণাগুলো কেন এমন বিভক্ত তার কারণ আমরা বুঝতে পারব একজন ব্যবহারকারী ফেসবুকে থাকাকালীন কি করে তার উপর ভিত্তি করে।
গসলিং বলেন, ‘ফেসবুকের ব্যাপারটা অনেক জটিল। কারণ এটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ছোট-বড় কাজে ব্যবহার করে এবং ব্যবহারটা পরিবর্তনশীল কারণ মানুষ পরিবর্তনশীল।’
কার্নেগী মেলন থেকে ২০১০ সালের গবেষণায় পাওয়া যায়, যখন মানুষ এই সরাসরি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত হয়, একে অন্যের ওয়ালে পোস্ট করে, খুদে বার্তা আদান-প্রদান করে, অন্যের কোনো কিছু ‘লাইক’ বা পছন্দ করে তারা এক সম্পর্কের বন্ধনে যুক্ত হয়ে পড়ে। তাদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় এবং একাকীত্ব কেটে যায়। কিন্তু যেসব নিস্ক্রিয় ব্যবহারকারী শুধুমাত্র অন্যের জিনিসপত্র দেখে কাটায় বা ভোগ/ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাদের যোগাযোগের অনুভূতি কমে যায়, একাকীত্ব বেড়ে যায়।
আরেকটি চলমান গবেষণায় মনোবিজ্ঞানী টিমোথি উইলসন জানান, কলেজ ছাত্ররা কোনো রুমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই খুব উত্তেজিত হয়ে যায় যদি তাদের সঙ্গে ফোন বা কম্পিউটার না থাকে। আমাদের মাঝে শূন্যতা কাজ করলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ করে ফেলতে চাই। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি আকর্ষণীয় আশ্রয়। আমরা বিরক্ত হলে ফেসবুক-টুইটার এ যাই এটা কাটানোর জন্য। কিন্তু আমরা আরও বিরক্ত হয়ে ফিরে আসি। আমরা ফেসবুক থেকে দূরে সরে গেলেই কোনো সমাধান হবে না। আমাদের মনোযোগ সঠিক দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের সব সময় ভুলে গেলে চলবে না আমাদের সঠিক কাজে যুক্ত রাখতে পারলেই আমরা সঠিক পথে এগুবো। এক্ষেত্রে ফেসবুক কোন সমস্যা নয়। এটা একটা রোগের উপসর্গ মাত্র।
মারিয়া কনিকোভা
নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার বই ‘মাস্টার মাইন্ড: হাউ টু থিংক লাইক শার্লক হোমস’ বইটির লেখিকা তিনি। রয়েছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি।
ক্রস ও তার সহযোগীরা অ্যান আরবর এলাকার ৮২ জন বাসিন্দার কাছে প্রত্যেক দিন ৫ বার করে খুদেবার্তা আদান-প্রদান করেন। গবেষক দল তাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চান; এই যেমন তাদের অনুভূতির স্বরূপ কেমন, তারা কতটুকু উদ্বিগ্ন, একাকী ইত্যাদি।
দুটি খুদেবার্তার মাঝে তারা কতক্ষণ ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তাও জানতে চাওয়া হয়। ক্রস দেখলেন, দুটি খুদেবার্তার মাঝে যত বেশি ফেসবুক ব্যবহার করা হয়েছে, তত কম সুখী হতে পেরেছে এবং গবেষণার শুরুতে তাদের সন্তুষ্টির/সুখের যে মাত্রা ছিল তা গবেষণার শেষে কম দেখা যায়। তথ্য-উপাত্তগুলোর মাধ্যমে তিনি দেখান যে, ফেসবুক তাদের সত্যিকার অর্থে অসুখী করছে।
ক্রসের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ইন্টারনেটের বিশেষ করে ফেসবুকের বৈরাগী/বিচ্ছিন্নতাবাদী চরিত্র। ১৯৯৮ সালে কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট ক্রাউট দেখান, মানুষ যত বেশি ওয়েব/ইন্টারনেট ব্যবহার করে তত বেশি একাকীত্বে ও হতাশায় ভুগে। মানুষ প্রথমবারের মত অনলাইনে যাওয়ার পর দেখল যে, বছর দুয়েকের মাঝে কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে তার উপর ভিত্তি করে তাদের সুখ বা সামাজিক যুক্ততার অনুভূতির হ্রাস ঘটেছে।
নিসঙ্গ মানুষেরা সাধারণত কমই অনলাইনে যায়। সম্প্রতি প্রায় ৭৫টি গবেষণাতে গবেষকরা দেখান, ‘ফেসবুক ব্যবহারকারী ও না ব্যবহারকারী দুদলেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট প্রায় সমান (গত বছর নাথান হেলার ‘একাকীত্ব’ নিয়ে একটি সাময়িকীতে এ কথাটি বলেন)।’
২০১০ সালে এ রকম ৪০টি গবেষণা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, আমাদের পুরোপুরি ভাল থাকার ওপর ইন্টারনেটের অল্প হলেও ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষণীয়। আরেকটি পরীক্ষায় সিদ্ধান্তে আসে যে, ফেসবুক আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে সমস্যার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে সৃষ্টি করে সন্দেহ ও ঈর্ষা। যতবেশি ফেসবুক ব্যবহার ততবেশি ঈর্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হানা ক্রাসনোভা ও তার সহকর্মীদের মতে, এ প্রভাবের কারণ হচ্ছে সামাজিক তুলনার মনোভাব যা সামাজিক মনোবিজ্ঞানের একটি অতি পরিচিত বিষয়। এটা আরও বেড়ে যায় যাদের সামাজিক নেটওয়ার্ক অভিন্ন। একই শ্রেণী-পেশার বা সমবয়সীদের মাঝে ঈর্ষার পরিমাণ বেড়ে যায় যদি অপরজনের অর্জন বেড়ে যায়।
ফেসবুকের প্রভাব নিয়ে একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় মনোবিজ্ঞানী বেথ অ্যান্ডারসন ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, ফেসবুক ব্যবহার খুব অল্প সময়েই আসক্তিতে রূপ নেয়। অনেকে নেতিবাচক মন নিয়ে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করে আবার বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেয়। আমরা অন্যদের জানতে চাই আবার জানাতেও চাই। কিন্তু এই জানাজানির প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের ও অন্যদের প্রাত্যহিক জীবনকে ঘৃণা করতে শুরু করি।
‘এ রকম হতে পারে যে, মানুষ যে জিনিস খুব পছন্দ করে তা শেষে বিরক্তিকর পরিণত হয়’ মনোবিদ স্যামুয়েল গসলিং নেটওয়ার্কিং ও ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একথা বলেন।
এর বিপরীত কথাও শোনা যায় বিভিন্ন গবেষণায়। ২০০৯ সালে সেবাস্টিয়ান ভ্যালেনজুয়েলা ও তার সহকর্মীরা ইথান ক্রস থেকে ভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তারা বলেন, ‘ফেসবুক আমাদের সুখী করে।’ তারা আরও দেখান, এতে সামাজিক বিশ্বস্ততা ও সম্পৃক্ততা বাড়ে, এমনকি রাজনীতিতে যুক্ত হতেও অনুপ্রাণিত করে।
ভেনিজুয়েলার গবেষণা সামাজিকতা নিয়ে ম্যাথু লিবারম্যান প্রখ্যাত বই ‘সোস্যাল: হোয়াই আওয়ার ব্রেইনস্ আর ওয়ারড্ টু কানেক্ট’ (Social: Why Our Brains are Wired to Connect) এর সঙ্গে মিলে যায়। সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে আমরা আদান-প্রদান করি এবং সফল আদান-প্রদান আমাদের মাঝে মনোজাগতিক ও শারীরিক উদ্দীপনা নিয়ে আসে।
সামাজিক মাধ্যমগুলোর উপস্থিতি আমাদের পড়া ও দেখার প্রক্রিয়াকে একেবারে পাল্টে দিয়েছ। আমরা যখন কোনো কিছু পড়ি বা দেখি তখন আমাদের মাথায় কাজ করে কার সঙ্গে, কিভাবে এটা শেয়ার করব। কোনো একটা বিষয় শেয়ার করার আগেই শুধু শেয়ার করার চিন্তাই আমাদের মস্তিষ্কের পুরস্কার প্রদান কেন্দ্রকে উদ্দীপ্ত করে।
ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ অনেকক্ষেত্রেই আমাদের চাপ ও কষ্ট কমাতে সাহায্য করে। লিবারম্যান ও তার সহকর্মীরা দেখান, দুঃখের সময় ছেলেবন্ধুর হাতের স্পর্শের চেয়ে তার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকা দ্বিগুণ কার্যকর নিয়ামক। দূরত্ব ও কল্পনার মিশেল আমাদের চাপ ও কষ্টের গায়ে শীতলতার প্রলেপ লাগিয়ে দেয়।
মনোবিজ্ঞানী ওয়েন্ডি গার্ডনার ও সিন্ডি পিকেট এটাকে বলেন, ‘সোশ্যাল স্ন্যাকিং’ (social snacking)।
এখন ফেসবুক আমাদের মনের ওপর কি প্রভাব ফেলে এ নিয়ে প্রখ্যাত গবেষণাগুলো কেন এমন বিভক্ত তার কারণ আমরা বুঝতে পারব একজন ব্যবহারকারী ফেসবুকে থাকাকালীন কি করে তার উপর ভিত্তি করে।
গসলিং বলেন, ‘ফেসবুকের ব্যাপারটা অনেক জটিল। কারণ এটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ছোট-বড় কাজে ব্যবহার করে এবং ব্যবহারটা পরিবর্তনশীল কারণ মানুষ পরিবর্তনশীল।’
কার্নেগী মেলন থেকে ২০১০ সালের গবেষণায় পাওয়া যায়, যখন মানুষ এই সরাসরি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত হয়, একে অন্যের ওয়ালে পোস্ট করে, খুদে বার্তা আদান-প্রদান করে, অন্যের কোনো কিছু ‘লাইক’ বা পছন্দ করে তারা এক সম্পর্কের বন্ধনে যুক্ত হয়ে পড়ে। তাদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় এবং একাকীত্ব কেটে যায়। কিন্তু যেসব নিস্ক্রিয় ব্যবহারকারী শুধুমাত্র অন্যের জিনিসপত্র দেখে কাটায় বা ভোগ/ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাদের যোগাযোগের অনুভূতি কমে যায়, একাকীত্ব বেড়ে যায়।
আরেকটি চলমান গবেষণায় মনোবিজ্ঞানী টিমোথি উইলসন জানান, কলেজ ছাত্ররা কোনো রুমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই খুব উত্তেজিত হয়ে যায় যদি তাদের সঙ্গে ফোন বা কম্পিউটার না থাকে। আমাদের মাঝে শূন্যতা কাজ করলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ করে ফেলতে চাই। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি আকর্ষণীয় আশ্রয়। আমরা বিরক্ত হলে ফেসবুক-টুইটার এ যাই এটা কাটানোর জন্য। কিন্তু আমরা আরও বিরক্ত হয়ে ফিরে আসি। আমরা ফেসবুক থেকে দূরে সরে গেলেই কোনো সমাধান হবে না। আমাদের মনোযোগ সঠিক দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের সব সময় ভুলে গেলে চলবে না আমাদের সঠিক কাজে যুক্ত রাখতে পারলেই আমরা সঠিক পথে এগুবো। এক্ষেত্রে ফেসবুক কোন সমস্যা নয়। এটা একটা রোগের উপসর্গ মাত্র।
মারিয়া কনিকোভা
নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার বই ‘মাস্টার মাইন্ড: হাউ টু থিংক লাইক শার্লক হোমস’ বইটির লেখিকা তিনি। রয়েছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন