GuidePedia

0
কেউ কেউ বলে যে, আইন হলো এক ধরনের সামাজিক নিয়ম। তা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের দৈনন্দিন জীবন এবং গোটা সমাজের ওপর আরোপ করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ বছরে প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন যে, আইন হচ্ছে এমন যে তা রাজার সর্বময় ক্ষমতার চেয়েও আরও অধিক শক্তিশালী। তবে আইন কেবল গুরুগম্ভীর আর কঠিন ত কিন্তু নয়, কখনো কখনো তা হাস্য আর কৌতুকপূর্ণও হয়ে ওঠে। আমরা যদি বিভিন্ন দেশের আইন সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করি তাহলে এসব মজার মজার তথ্য খুঁজে পাবো।ফ্রান্সে নারীদের পাজামা পরা নিষিদ্ধ ছিল? এবং সেটা ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। গত ৩১ জানুয়ারি ফ্রান্সের নারী অধিকার মন্ত্রী একটি দলিলে স্বাক্ষর করে ২০০ বছরেরও বেশি পুরাতন এই উদ্ভট হাস্যকর আইনটি বাতিল করেছেন। তার মানে ফ্রান্সের নারীরা মাত্র মাস দুয়েক ধরে বৈধতার সাথে পাজামা পড়ছে, এর আগে পর্যন্ত যা ছিল অবৈধ। হাস্যকর এই আইনটি ১৮০০ সালে কার্যকর হয়। আইনে বলা হয়েছিল যে, প্যারিসের নারীরা যদি পুরুষের মতো পাজামা পরতে চায়, তাহলে প্রথমে প্যারিসের পুলিশ দপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে।

বিজ্ঞ বিচারক নিশ্চয়ই এ আইন অনুযায়ী কাউকে কারাগারে পাঠাবে না। আমরা সবাই জানি প্যারিস এবং ফ্রান্স হল বিশ্বের ফ্যাশন স্টাইলের উত্স। সেখানকার নারীরা সুন্দর হতে অনেক আগ্রহী।

২০০৩ সালে ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি’র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক পার্টি ইউ এম পি’র একজন সদস্য পার্লামেন্টের কাছে এ আইনকে বাতিলের প্রস্তাব দিয়ে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর ২০১২ সালের জুলাইয়ে, ফ্রান্সের আরেকজন পার্লামেন্ট সদস্য এই আইন বিলুপ্তির আহ্বান জানায়। তিনি বলেন, এ আইন ফ্যাশন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস আর রুচিকে অপমান করছে, বিব্রত করছে।

এখন আমরা ব্রিটেনের দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। ২০০৮ সালে ব্রিটেনের ইউকে টিভি ‘দেশের দশটি সবচেয়ে হাস্যকর আইনের’ বিষয় নিয়ে একটি জনজরিপ করা হয়েছে। এই হাস্যকর আইনের এ তালিকার প্রথম স্থানে কোন বিষয়টি রয়েছে? এ আইনের বিষয় হলো: পার্লামেন্ট ভবনে মৃত্যুবরণ করা আইনত নিষিদ্ধ। কী উদ্ভট আইন।

কিছু কিছু আইন বিশেষজ্ঞ এই প্রসঙ্গে আরও বেশি হাস্যকর যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন- তাদের যুক্তি এরকম যে, পার্লামেন্ট ভবন হচ্ছে একটি রাজপ্রাসাদ, তাই যদি কেউ এই রাজপ্রাসাদে অর্থাৎ পার্লামেন্ট ভবনে মারা যান তাহলে তার রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করতে হবে, কেননা তখন এটা তার একটি অধিকার। তাই অনেকে ঠাট্টা করে বলেন- পার্লামেন্ট ভবনে যে মূহুর্তে আপনার কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিবে, অবিলম্বে স্বেচ্ছাসেবক দল এসে আপনাকে পার্লমেন্টের বাইরে নিয়ে যাবে, যাতে রাজকীয় ভাবে সমাহিত হবার অধিকারটি আপনার ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য না হয় এবং একই সাথে মৃত্যুর কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হতে না হয়।

আমেরিকার একটি অদ্ভুত আইন সম্পর্কে বলি। এখন স্মার্টফোন জনগণের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এই ফোনে বিশেষ কিছু অপশন আছে যা নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়ারের মাধ্যমে লক বা আনলক করতে হয়। তাই সবাইতো যার যার নিজের স্মার্টফোনটিকে আনলক করে আরো বেশি এবং সহজে বিভিন্ন মজার মজার সফটওয়ার ইনস্টল করতে চাইবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় লাইব্রেরি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে যে স্মার্টফোনের বিশেষ কিছু অপশন তাদের অনুমতি ছাড়া আনলক করা যাবে না। কেননা এভাবে নির্বচারে ব্যবহার করলে তা বিভিন্ন সফ্টওয়ারের কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করবে। অবশ্য এটি ব্যবহারে একটি পূর্বশর্ত আছে, আর তা হলো টেলিযোগাযোগ কোম্পানীর অনুমোদন ছাড়া স্মার্টফোন আনলোক করা আইনত দণ্ডযোগ্য অপরাধ।

এ আইনটি শুনতে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। তবে এখানে একটি হাস্যকর বিষয়ও রয়েছে। মার্কিন নেট ব্যবহারকারীরাও বলে যে, এই আইন হলো ২০১৩ সালের সবচেয়ে হাস্যকর আইন। যেমন, যদি কোনো মানুষ জেনুইন এবং অথরাইজড একটি ভিডিও ক্রয় করে, সেটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেখার সুযোগ নেই। এটা কেন দেখা যাবে না বা কেন আমাদের ফোনকে আনলোক করে সংশ্লিষ্ট সফটওয়ার ইনস্টল করার অধিকার নেই? এটা একদমই ঠিক না।

এখন পিসি গ্যাম তো খুব জনপ্রিয়। বাসায়, পানশালায়, অথবা ভ্রমণ পথের যেকোনো স্থানে সময় কাটাতে চাইলে পিসি গ্যাম খেলতে পারেন। তবে যদি আপনি গ্রিসে ভ্রমণ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, সে দেশে পিসি গ্যাম খেলার কথা চিন্তায়ও আনবেন না। কারণ সে দেশের আইন অনুযায়ী, পিসি গ্যাম খেললে তিন মাসের জেল খাটতে হবে এবং এর সাথে ১০ হাজার ইউরো জরিমানাও গুনতে হবে।

গ্রিস সরকার জুয়া খেলা নিয়ণ্ত্রণের জন্য এমন আইন জারি করেছে। তবে অনেকেই বলে, যদি জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করতে চায়, তাহলে তো কেবল ক্যাফে এবং পানশালার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যথেষ্ট। অবশ্য বসায় বসে গ্যাম খেললে আইনের দৃষ্টিতে কোনো অসুধিবা হবে নেই।

বিশ্বের অনেক দেশে এমন হাস্যকার আইন রয়েছে আর মজার বিষয় হচ্ছে এ সম্পর্কে ব্রিটেনের একজন লেখক একটি বইও লিখেছেন। বইটির নাম ‘হাস্যকর আইন’। বই-এ বিশ্বের ২৫০টি দেশের সবচেয়ে উদ্ভট আর হাস্যকর আইন সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে প্রকাশ করেছে।

যেমন বইতে লেখা আছে, থাইল্যান্ডে আন্ডারওয়ার না পরে বাইরে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয়। আবার কোমরের ওপর খোলা শরীর নিয়ে গড়ি চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

সুইডেনে খুব মজার একটি আইন আছে। সুইডেনের আইন অনুযায়ী, রাত দশটার পর টয়লেটে ফ্লাশ করা নিষিদ্ধ। ঘ্রাণশক্তি/ বায়ু দূষণের তুলনায় সুইডেন সরকার মনে করে শব্দদূষণ আরো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তাই যদি আপনি দশটার পর টয়েলেটে ফ্লাশ করেন তাহলে আপনি পরিষ্কার ভাবেই আইন লঙ্ঘন করবেন এবং যথাযথ শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে।

আমরা জানি কাঁঠাল খুব ভালো সুস্বাদু ফল। কিন্তু ব্রুনেইতে যদি আপনি কোনো প্রকাশ্য স্থানে কাঁঠাল খাওয়া শুরু করেন তাহলে আপনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। বাসে, সাবওয়েতে, হোটেলে এবং বিমানবন্দরে কাঁঠাল খেতে নিষিদ্ধ করেছে ব্রুনেই সরকার।

সিংগাপুরের একটি আইন যা খুব কঠোর এবং তা বিশ্ববিখ্যাত। তুমি কি চুইংগাম খাওয়া পছন্দ কর? যদি কখনো সিংগাপুরে প্রকাশ্যে চুইংগাম খাও, নিশ্চিত ভাবে তুমি করাগারে যাওয়ার জন্য তৈরী থাকতে পরো। ১৯৯২ সাল থেকে সিংগাপুরে প্রকাশ্যে চুইংগাম খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। সূত্র: ওয়েসবাইট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top