GuidePedia

0
ধূমপান ছাড়লেই বেশি আয়!!!
সিগারেটে টান দেয়া কি আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ? তাহলে আপনার জন্য দুঃসংবাদ। ধূমপানে আসক্ত ব্যক্তিরা অধিক অর্থ উপার্জন করতে পারে না। ধূমপান না ছাড়লে অধিক আয়ের স্বপ্ন আপনার জন্য স্বপ্নই থেকে যাবে। নতুন এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা। আবার এর উল্টো মতও দিয়েছেন কোনো কোনো গবেষক।
আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আটলান্টার দুজন অর্থনীতিবিদ জুলি হচকিস ও মেলিন্ডা পিটসের প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, অধূমপায়ীদের আয়ের মাত্র ৮০ শতাংশের সমান আয় করতে পারে ধূমপায়ীরা।
অবশ্য যারা আগে ধূমপান করতেন এবং এক বছরের বেশি সময় আগে ছেড়ে দিয়েছেন, তারা অধূমপায়ীদের চেয়ে সাত শতাংশ বেশি আয় করেন বলেও সিএনবিসিতে প্রকাশিত গবেষণায় দাবি করা হয়।
গবেষকদ্বয় জানান, “একজন মানুষ ধূমপান করেন, এটাই শ্রমবাজারে পার্থক্য তৈরির জন্য যথেষ্ট। তিনি ধূমপানে কতটুকু আসক্ত, সেটা বিষয় নয়। এমনকি দিনে মাত্র একটি সিগারেট খেলেও আয়ের পার্থক্য তৈরি হবে।”
কিন্তু এর উল্টো গল্পও আছে। জ্যাক ব্র্যাডওয়ে পেশায় একজন বিক্রেতা। তিনি দিনে দেড় প্যাকেট সিগারেট শেষ করেন। ৩৬ বছর বয়সী এই নিউইয়র্কের অধিবাসীর দাবি, ধূমপানের অভ্যাস তার আয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। তিনি বলেন, “আমার মনে পড়ে না ধূমপানের কারণে আমি কখনো কম আয় করেছি বা আমার কোনো পদোন্নতি আটকে গেছে। তবে ধূমপান না করলে ডেস্কে প্রতিদিন ৩০ মিনিট বেশি সময় দিতে পারতাম।”
dhumpanaতবে হচকিস ও পিটসের দাবি, ধূম্রশলাকার ধোঁয়া মানুষের আয়কে প্রভাবিত করবেই। অবশ্য তারা বলেছেন, তুখোড় ধূমপায়ীরা অন্য কর্মীদের চেয়ে কম উৎপাদনক্ষম নয়। এই গবেষকযুগল দাবি করেন, ভৌগোলিক অবস্থানও ধূমপায়ী ও অধূমপায়ীদের মধ্যে আয়ের পার্থক্য তৈরি করে। তারা বলেন, ধূমপায়ীরা সাধারণত অধূমপায়ীদের চেয়ে কম শিক্ষিত হয়।

অন্যদিকে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ফ্র্যাঙ্ক স্টাফোর্ড বিষয়টি নিয়ে একটু ভিন্নভাবে বললেন। তিনি বলেন, “ধূমপানের ফলে আয়ের পার্থক্যের বিষয়টির পেছনে বেশ জোরালো প্রমাণ আছে। কিন্তু এটা বিশ্বাস করা সত্যিই দুষ্কর যে এর জন্য কেবল ধূমপানই দায়ী।”
তাহলে আর কী বিষয় আছে যার কারণে মানুষকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকতে হয়?
এ প্রশ্নের উত্তরে স্টাফোর্ডসহ আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “এটা একজন ধূমপায়ীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবের ফল। তা ছাড়া ধূমপান ছাড়তে না পারার অযোগ্যতাও এর জন্য দায়ী।”
ধূমপানের কারণে আয় নিয়ে যখন এত নেতিবাচক প্রচারণা, তখন ইনভেনটিভ ট্যালেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি কিম রুলে যেন বোমা ফাটালেন। তার মতে, ধূমপায়ীদের মধ্যে এমন কিছু গুণ আছে যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বেশি ইতিবাচক! তিনি বলেন, “নেতৃত্বের একটি সামাজিক দিক আছে, যেটি গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ধূমপানেরও একটি সামাজিক দিক আছে।”
রুলে স্বীকার করেছেন, ধূমপান ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ। কিন্তু কিছু কিছু পেশায় এই ঝুঁকিটুকুই বেশি অর্থ সমাগমের ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
তার বক্তব্য, “বেশির ভাগ সক্রিয় নেতাই বৈশিষ্ট্যগতভাবে বেশ উৎসাহী। তারা পরীক্ষা করতে ভালোবাসে। তা ছাড়া সাধারণ মানুষের চেয়ে তারা অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হয়।”
অবশ্য ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন এমন মানুষের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক বিষয় আছে বলে দাবি করেন আরেক বিশেষজ্ঞ। তার মতে, ধূমপান ছেড়ে দেয়ার সময় ধূমপায়ী ব্যক্তি পুরোনো অভ্যাস ছাড়তে প্রচুর শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা চর্চা করে, যা যেকোনো মানুষের ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক।
জর্জ বুয়ে নামের এই বিশেষজ্ঞের দাবি, “কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়মানুবর্তিতা বেশ কাজে দেয়। যেকোনো আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা একটা ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল। আর এটাই হয়তো শ্রমবাজারে পার্থক্য তৈরিতে ভূমিকা পালন করে।”
কিন্তু এত সব গবেষণা আর বিশেষজ্ঞের মতামতের পরও ধূমপায়ীদের বাস্তব চিত্রটা একটু ভিন্নই। আর সেটাই যেন প্রমাণ পেল এমিলি বাসচের নামের একজন মাননিয়ন্ত্রণ কর্মীর কথায়। ২৮ বছর বয়সী বাসচের ১৫ বছর বয়স থেকে ধূমপান করছেন। তার দাবি, এই ১৩ বছরে একবারও স্রেফ ধূমপানের কারণে তার পেছনে পড়ে থাকার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, “আমি যাদের সঙ্গে কাজ করি, তারা সবাই ধূমপান করে।”
তাছাড়া বাসচেরের ধারণা, ধূমপান ছেড়ে দিলে কর্তৃপক্ষ ভাববে, “তিনি একজন প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন মানুষ। হয়তো এটা আরও বড় পদে চাকরির জন্য যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top