GuidePedia

0

ক্ষুধা মেটানোর জন্য ইঁদুর খেয়ে চার মাস!
ক্ষুধা মেটানোর খোরাক একমাত্র ইঁদুর। পিপাসা নিবারণের উপায় বরফ। এভাবে কেটে গেছে পুরো চারটি মাস। তাও কোনও ঘরে নয়। আন্দিজ পর্বতমালায়। গতকাল আন্দিজ পর্বতমালা থেকে এভাবে বেঁচে থাকা এক ব্যক্তিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছে উদ্ধার-কর্মীরা।

উদ্ধার-কর্মীদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়,  আন্দিজ পর্বতমালার বরফের গভীরতা মাপতে কয়েকজন জরিপ-কর্মী সেখানে গিয়েছিলেন। পর্বতের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের কাছে একটা নড়াচড়া দেখতে পান তারা। ভাল করে খেয়াল করে তারা বুঝতে পারেন এটা মানুষ!

পরে ওই ব্যক্তিকে জরিপ-কর্মীদের সঙ্গে থাকা উদ্ধারকারীরা কোনও রকমে একটা হেলিকপ্টার করে নীচে নামিয়ে আনেন। একটু সুস্থ হলে তাঁকে প্রশ্ন করে হতবাক হয়ে যান চিকিৎসকেরা। ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর নাম রাউল ফার্নান্দো গোমেজ সার্কানেগুই। উরুগুয়ের বাসিন্দা। গত মে মাসে চিলি থেকে আর্জেন্টিনা যাওয়ার পথে এই আন্দিজ পর্বতমালা এলাকায় তাঁর মোটরবাইক খারাপ হয়ে যায়।

এ দিকে তখনই শুরু হয় তুষারঝড়। পথ হারিয়ে চার মাস নাকি এই অঞ্চলেই কাটিয়েছেন রাউল। সম্পূর্ণ একা। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীত শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় লোকের যাতায়াত এমনিতেই কমে যায়। ফলে কারও সাহায্য মেলেনি।

এ দিক ও দিক ঘুরতে ঘুরতেই পাহাড়ের ফাঁকে গুহার মতো একটা অংশ খুঁজে পান রাউল। সাধারণত গরমের সময়ে পশু চরাতে এসে এখানেই সময় কাটান মেষপালকেরা। তাঁদের ফেলে যাওয়া খাবারের কিছু অংশ পড়েছিল। তাই দিয়ে ক’দিন কোনও রকমে কেটে গেল। ভাবলেন তুষারপাত কমলে রাস্তা খোঁজা শুরু করবেন। কিন্তু তুষারপাত ক্রমে বাড়তেই লাগল।

এ দিকে খাবারও শেষ। অগত্যা তুষারপাতের মধ্যেই খাবার খোঁজা শুরু। অস্ত্র বলতে সম্বল গুহায় ফেলে যাওয়া একটা ছুরি। তা দিয়েই বরফের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাহাড়ি ইঁদুর শিকার শুরু করলেন। আর তেষ্টা পেলে বরফ তো আছেই।

এই ভাবেই কেটে গেল চার মাস। তত দিনে অবশ্য দিন রাতের হিসেব গুলিয়ে ফেলেছিলেন রাউল। ভেবেই নিয়েছিলেন আর বাঁচবেন না। হঠাৎই কয়েক জনের কথা শুনতে পেলেন। ততক্ষণে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। চিৎকার করতে গিয়ে দেখলেন আওয়াজ বেরোলো না। কী করবেন? গুহার মুখটা ঢাকা দেওয়ার আচ্ছাদনটাকে কোনও রকমে এগিয়ে দিলেন। যদি কেউ হোঁচট খায়। উদ্দেশ্য সফল। হোঁচট খেলেন অভিযাত্রীরা।

রাউলের কাছ থেকে তাঁর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে ফোন করতে জানা গেল বাড়িতে মা, স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছেন। মে মাসে রাউল নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে খুঁজতে লোক লাগিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। দু’মাস খোঁজার পরে জুলাইয়ে প্রবল তুষারপাত শুরু হওয়ায় খোঁজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তত দিনে অবশ্য তাঁর বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন পরিবারের সবাই।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই চার মাসে প্রায় ২০ কেজি ওজন কমে গিয়েছে রাউলের। শরীরে প্রবল জলের অভাব। এমনিতেই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তবে এত কিছু সত্ত্বেও রাউল যে বেঁচে রয়েছেন এবং তেমন কিছু শারীরিক সমস্যা ছাড়াই, তাতেই আশ্চর্য চিকিৎসকেরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top