১৯ বছর বয়স তবুও শিশু

আজিফা খাতুন নামের মেয়েটি যখন তার ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলা করে কিংবা মায়ের গলা জড়িয়ে কোলো বসে থাকে, তখন তাকে যে কেউ দুধের শিশু বলেই মনে করবে। কিন্তু আজিফার আসল বয়স ১৯/ যদিও তাকে দেখতে লাগে দু’বছরের বাচ্চার মতো। দু’বছর পার হওয়ার পর থেকেই থেমে গেছে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি। ফলে তার দৈহিক আকৃতি এবং আচার আচরণ শিশুদের মতো হয়ে গেছে। তার ওজন ১ স্টোন ৩ পাউন্ড (৭ দশমিক ৭১ কেজি)বাচ্চাদের মতো এখনো তাকে চামচে তুলে খাওয়াতে হয়। দিব্যি মা আপিলা খাতুনের কোলে চড়ে ঘুরে বেড়ায় সে। আজিফার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মিরপার এলাকায়, ১৯৯৪ সালে। আর দশটা পাঁচটা শিশুর মতই জন্ম হয়েছিল তার। তখন সে দেখতে বেশ নাদুস নুদুসই ছিল। হাঁটাচলাও শুরু করেছিল সঠিক সময়েই। কিন্তু দু’বছর পার হওয়ার পরই থেমে যায় তার বেড়ে ওঠা। প্রথম দিকে চিকিৎসকরা তার বাবা-মাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আজিফা আবার একদিন বাড়তে শুরু করবে। কিন্তু তাদের ধারণা সত্য হয়নি। প্রথমে আজিফার অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা তার ক্যানসার হয়েছে বলে সন্দেহ করেছিলেন। পরে তারা আবিষ্কার করেন, বিরল বংশগত রোগ লারন সিনড্রোমে ভুগছে সে। বিশ্বে এ রোগীর সংখ্যা মাত্র ৩শ’এদের এক তৃতীয়াংশেরই বাস ইকুয়েডরের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোজা প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায়। তারা লারন নামক হরমন জটিলতায় ভুগছে। মজার কথা হলো, এসব রোগীরা কখনো ক্যানসার বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে না। আজিফার ছোট দুই বোন রিনি (১৭) ও রাবেয়া (১৪) আর এক ভাই দানিশ (৮) স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে। সে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। মা, বাবা আর দিদি এ তিনটি ছাড়া আর কোনো শব্দ সে বলতে পারে না। দেখতেই শুধু ছোট নয় সে, তার বুদ্ধিও বাচ্চাদের মতই। তার আইকিউ ২০ এরও কম। আজিফার সময় কাটে তার ভাইবোনের সঙ্গে খেলাধূলা করে। তবে কারো সাহায্য ছাড়া দু’এক কদমের বেশি এগুতে পারে না সে। মা কাপিলা খাতুন দ্য সান পত্রিকাকে বলেন, তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে। কিন্তু তার থেমে যাওয়া জীবন দেখলে কষ্টে বুক ভেঙে যায়। তবে মেয়েকে নিয়ে আনন্দেই আছেন বাবা শেখ। তিনি জানান, আজিফা তার পরিবারের জন্য অনেক আনন্দ আর খুশি বয়ে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, সে সবার সঙ্গে আলাপ করতে পারে না ঠিকই। কিন্তু তার চারপাশের ঘটনাপ্রবাহ ঠিকই অনুভব করতে পারে।
১৯ বছর বয়স তবুও শিশু/শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন