GuidePedia

0
চুলোয় নয়, খাবার তৈরি করুন থ্রিডি প্রিন্টারে
চুলোয় নয়, খাবার তৈরি করুন থ্রিডি প্রিন্টারে

কেমন হয় খাবার দাবার রাঁধার কাজটাও যদি এবার যন্ত্রের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় পুরোপুরি? সন্দের নেই খাবার রাঁধা পরিবেশনার জন্য একজন মানুষের দিনের একটা বড় সময় ব্যয় করতে হয়। আর মানুষটি যদি নারী হয়, তবে বলা যায় তার প্রায় গোটা জীবনটিই পার হয়ে যায় রান্নাঘরে পরিবারের সকলের জন্য রাঁধতে রাঁধতেই। রোবট শিল্প বিগত কয়েক বছরে বেশ এগিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রান্নার কাজে যন্ত্রমানবের ওপর নির্ভর করার কথা শোনা যায়নি।  কিন্তু রোবট নয়, সম্প্রতি খাবার-দাবার তৈরির ঝক্কি কমাতে তৈরি করা হয়েছে ফুডিনি নামের এক ধরনের থ্রিডি প্রিন্টার। খাবারের কাঁচামাল আর নকশা দিয়ে দিলেই প্রিন্টার দিয়ে চমৎকারভাবে বেরিয়ে আসবে গরম খাবার।
থ্রি-ডি প্রিন্টার কি ?
প্রিন্টার শব্দটির সঙ্গে আমাদের যাদের পরিচয় কেবল সাদা কাগজে কালো হরফ বসানোর যন্ত্র হিসেবে, তাদের সঙ্গে প্রথমে থ্রিডি প্রিন্টারের পরিচয়টি করে দেয়াটা জরুরি। সাধারণ প্রিন্টারগুলো কেবলমাত্র টু-ডি বা দ্বিমাত্রিক (যার কেবল দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ আছে) বস্তুই প্রিন্ট করে বের করতে পারে। সেদিক থেকে বিচার করলে নাম শুনেই বোঝা যায় থ্রি-ডি প্রিন্টারে কেবল কাগজের মতো দ্বিমাত্রিক বস্তুই নয়, উচ্চতাসম্পন্ন ত্রিমাত্রিক বস্তুও বের করা যায়। এর জন্য বস্তুটি তৈরিতে থ্রি-ডি প্রিন্টার বান্ধব কাঁচামাল এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নকশা এবং নির্দেশনা দিতে হয়। এরপর নকশা এবং নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে পুরো বস্তুটি তৈরি করার দায়িত্ব থ্রি-প্রিন্টারের। তাই থ্রি-ডি প্রিন্টারকে প্রিন্টার না বলে রোবটও বলে থাকেন অনেকে। ১৯৮৪ সালে কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো প্রথম থ্রি-ডি প্রিন্টারটি তৈরি করা হলেও ২০১০ সালের আগে বানিজ্যিকভাবে থ্রি-ডি প্রিন্টার উৎপাদন শুরু করা হয়নি। গত বছর ইন্টারনেটে থ্রি-ডি প্রিন্টার দিয়ে বন্দুক তৈরির নকশা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এনিয়ে তোলপাড়ও কম হয়নি।
ফুডিনি কিভাবে কাজ করে?
এবার ফিরে আসা যাক ফুডিনির প্রসঙ্গে। স্পেনের বার্সেলোনাভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল মেশিনের তৈরি করা এই থ্রি-ডি প্রিন্টার দিয়ে তৈরি করা যাবে খাবার। যেমন একটি পিজা বা বার্গার বানানোর কথাই ধরা যাক। প্রথমে ফুডিনি সক্রিয় করার পরপরই তার টাচস্ক্রিণে ভেসে উঠবে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির মডেল। সেখান থেকে একটি মডেল বেছে নিলেই চলবে। টু-ডি প্রিন্টারে যেমন প্রয়োজন পড়ে কালির, তেমনি থ্রি-প্রিন্টার ফুডিনির জন্য জ্বালানি হিসেবে কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের ফুড ক্যাপসুল বিক্রি করে থাকে, যেগুলো মূলত হয়ে থাকে অর্ধ-তরল ময়দার তাল, টমেটো সস ইত্যাদি। ফুডিনিতে মোট পাঁচ ধরনের ক্যাপসুল থাকে। নকশা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা উপাদানের কাজ শেষ হওয়া মাত্র ফুডিনি নিজ থেকেই অন্য ফুড টিউবের কাজ শুরু করবে।
নকশা মতো তরল বসাচ্ছে ফুডিনি
নকশা মতো তরল বসাচ্ছে ফুডিনি
নির্দিষ্ট মডেলের খাবার বেছে নেয়ার পরই এই জ্বালানিগুলো নিয়ে ফুডিনি খাবার তৈরি শুরু করে। এরপরে ভেতরে থাকা নকশা অনুযায়ী, ফুডিনি তার টিউবে ফুড টিউব থেকে মাখানো ময়দার তালটি গলিয়ে নিবে এবং তার টিউবের মাধ্যমে তা বসানো শুরু করবে। নির্দিষ্ট ছাঁচ অনুযায়ী ময়দা বসানো হয়ে গেলে এরপর হয়ত তার ওপর দিয়ে টমোটো সস অথবা পনিরের আস্তর বসানো হবে। মোটামুটি ছাঁচে বসানো খাদ্যের আকার চলে এলে এই অর্ধতরল অংশটি মাইক্রোওয়েভ ওভেনে নিয়ে তাপ দিলেই তা শক্ত হয়ে যাবে। ব্যস, এরপরেই যান্ত্রিক হাতে তৈরি খাবার প্রস্তুত। পুরো খাবারে স্বাদের ঘাটতি হবে না এতোটুকু। বরং হাতে তৈরি খাবারের ক্ষেত্রে যেমন টমেটো সস বা এধরনের অর্ধতরল বস্তুগুলো বসাতে গিয়ে তা এদিক-ওদিক বেঁকে যায়, তার কোনোটাই হবে না জাদুকরী এই প্রিন্টারে।
ফুডিনির প্রস্তুতকারক কোম্পানি ন্যাচারাল মেশিনের স্বত্ত্বাধিকারী লাইনেট কুকুসমা বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোজা অ্যাভেলানেডার নিজের একটি বেকারি ছিলো। রোজা খেয়াল করলো, খাদ্যের উৎপাদনের যে খরচ তার মাত্র ২০ শতাংশ যায় কাঁচামাল কিনতে আর বাকি পুরো উৎপাদন খরচটাই যায় খাদ্য প্রস্তুতে। আর এই খরচটি কমিয়ে আনতেই তাদের মাথায় থ্রি-ডি প্রিন্টারের ধারণাটি আসে।’ নতুন এই প্রিন্টার খাদ্য উৎপাদনে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মতো একটি বিপ্লব নিয়ে আসবে বলে মনে করেন লাইনেট। এ বছরের মধ্যেই এই প্রিন্টার বাজারে আসবে। আর নিজের রান্নাঘরে একটি ফুডিনি পেতে আগ্রহীদের খরচ করতে হবে ৮৩৫ পাউন্ড। তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল
চুলোয় নয়, খাবার তৈরি করুন থ্রিডি প্রিন্টারে/শেয়ার প্লিজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top