GuidePedia

0
মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ
আফ্রিকা মহাদেশে ধর্ম এবং ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরনের  অমানুষিক নির্যাতন৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদ তাদের মধ্যে একটি৷ তবে মালিতে সম্প্রতি এর  বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন নারী ও ধর্মীয় নেতারা৷মেয়েরা যেন সহবাস উপভোগ  করতে না পারে বা সতীত্ব রক্ষার নামে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে  নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম করা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব  অনুযায়ী, ঐ দুই মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রায় ১২০ থেকে ১৪০ মিলিয়ন নারী  অমানবিক এই ঘটনার শিকার হয়েছেন৷
মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ

ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের  যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে তাদের শরীরে তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানান সমস্যা  দেখা দেয়৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অমানবিক কাজটি করানো হয় অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা৷  এছাড়া, কোনো ধরনের চেতনানাশক ছাড়াই এ কাজটি করা হয়ে বলে এতে যেমন প্রচুর  রক্তপাত হয় তেমন ব্যথাও হয় ভীষণ৷ বাচ্চা প্রসবের সময় এই নারীরা যে যন্ত্রণা  ভোগ করেন তা ভাষায় বলে বোঝানো মুশকিল৷ এর ফলে অনেকে মা হবার ক্ষমতা  পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন৷ অনেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণে মারাও যায়৷
ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে তাদের শরীরে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানান সমস্যা দেখা দেয়।
মালির  অধিবাসী ডিকো অনগোয়িবা যখন ছোট ছিলেন, তখন তাঁকেও এই পরিস্থিতির মধ্যে  দিয়ে যেতে হয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনা ছিল নিষিদ্ধ৷ এখন তাঁর বয়স ৪০ বছর৷ অথচ  মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর যৌনাঙ্গচ্ছেদ হয়েছে৷ নিজের প্রথম ৬ মেয়ের  ক্ষেত্রেও অনগোয়িবা এই কাজ করেছেন৷ কিন্তু এখন তার উপলব্ধি হয়েছে, এর ফলে  সন্তান জন্মদানে বেশ কষ্ট হয় তাঁর৷ আর তাই তার ছোট দুই মেয়ের ক্ষেত্রে  যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত খুব সহজ  নয়, কেননা সমাজের দ্বারা প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয় থাকে৷ আর তিনি না করলেও  সমাজের লোকজন জোর করে তাদের করে দিতে পারে৷
বৃহস্পতিবার ছিল ‘জিরো  টলারেন্স টু জেনিটাল মিউটিলেশন বা আন্তর্জাতিক যৌনাঙ্গচ্ছেদ বিরোধী দিবস৷  মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে বেসরকারি সংস্থা  টোস্তান সেদিন মালির রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ এই সংগঠনটিতে  আফ্রিকার আটটি দেশের ৭ হাজার কর্মী কাজ করেন৷
টোস্তানের প্রতিষ্ঠাতা  মলি মেলচিং জানান, এই আয়োজনের ফলে অনেক মা তাদের সন্তানদের এই অমানুষিক  নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন৷ তবে তিনি বলেন, এ  জন্য সমাজে নারীর প্রতি সম্মান বাড়ানোটা খুব জরুরি৷ এমন সমাজ গড়ে তুলতে হবে  যেখানে অভিভাবকরা তার সন্তানটিকে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে দিবেন না এবং  যিনি ঐ নারীকে বিয়ে করবেন তিনিও চাইবেন যে মেয়েটির যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করা  হোক৷
মালির ৮৯ ভাগ নারী ও মেয়ে শিশুরা যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷ ফান্তা  করোমা নামে একজন গৃহিণী জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তিনি এফজিএম এর বিরুদ্ধে কাজ  করে যাচ্ছেন৷ কেননা যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে এক মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি৷  দ্বিতীয় যে কন্যা সন্তানটি হয়েছে, তারও জীবন সংশয় রয়েছে৷ বর্তমান পরিস্থিতি  চলতে থাকলে বিশ্বের অন্তত ৮ কোটি ৬০ লাখ নারী ২০৩০ সালের মধ্যে এই  পরিস্থিতির শিকার হবে বলে জানিয়েছে ইউএনএফপিএ৷
অনুষ্ঠানে যোগ দেন  মালির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারাও৷ ১৪টি সম্প্রদায়ের মুখপাত্র মোসোকোরা  সিদিবে অবশ্য জানান, তারা তাদের সম্প্রদায়ে জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন  এবং এফজিএম এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন৷
এটিকে ধর্মীয় প্রথা হিসেবে  চালালেও বর্তমানে কিছু ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ  কোরআন শরীফে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের কথা বলা নেই৷ এসব নেতারা টোস্তানের  সাথে তিন বছর ধরে কাজ করছেন৷ তাদের উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে বিষয়টি তুলে ধরা,  যাতে প্রতিটি সম্প্রদায় সমাজ সচেতনে সোচ্চার হয় এবং যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ করে৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top