GuidePedia

0
'ভালোবাসার সুখ’ গল্পটা উৎসর্গ করে সহব্লগারদের প্রতি আমার ভালোবাসার কথা জানালাম। গল্পটায় কতটা ভালোবাসা আছে জানি না। কিন্তু আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা তার চাইতেও অনেক গুণ বেশী।) 

আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। বিশ্ব ভালবাসা দিবস। প্রতি বছরই এই দিনে আদনান একটি চিঠি লিখে। বলতে পারেন অনেকটা মনের অজান্তে কিংবা সামরিক বাহিনীর কোন রুটিন বাঁধা ট্রেনিং এর মতো। কিন্তু পোষ্ট করা হয় না। স্মৃতির ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখে। তবে পড়া হয় মাঝে মাঝে। এই ধরেন কোন অলস দুপুরে, নতুবা একাকি কোন সন্ধ্যে বেলায় কিংবা গভীর রাতে নির্জন জোসনার আলোয়। পড়া শেষে আবার স্বযতনে তুলে রাখে স্মৃতির ড্রয়ারে। 
“তোমার মনে আছে অহনা আমাদের কলেজের ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছটির কথা? ঐ যে বিশাল খেলার মাঠটির ঠিক দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় একাকী দাঁড়িয়ে ছিল। বসন্ত কালে যখন ফুল ফুটত দূর থেকে মনে হত যেন মাঠের কোনায় আগুন জ্বলছে। বহু বছর পেরিয়ে গেছে। তা বলতে পার প্রায় এক যুগ হবে। গাছটা কিন্তু আজও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কি এক অজানা কারণে গাছটাতে এখন আর ফুল ফুটে না। বসন্ত এলে আর নতুন করে পাতা গজায় না। অসহায়ের মতো কৃষ্ণচূড়া গাছটি শুধু চেয়ে থাকে। বন্ধ্যা নারীর সন্তান লাভের করুণ আকুলতা নিয়ে। ছুটিতে বাড়ি এলে আজও আমি কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে একবার হলেও বসি। আর মুহূর্তের দমকা হাওয়ায় খুলে যায় আমার স্মৃতির দরজা। 

পালে লেগেছে পবনের দোলা
বৈঠা হাতে মাঝি যেন করছে খেলা
কুলে ভিড়াইবার বৃথা চেষ্টায় বহিয়া যায় তার বেলা। 

তোমার খোঁপায় একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া গুঁজে দিয়ে কতদিন কতো বেলা আমি অবাক তাকিয়ে ছিলাম। পলক ফেলতে যেন ভুলেই যেতাম। চিমটি কেটে তুমি আমার সম্বিৎ ফেরাতে। 
তোমার মনে পড়ে অহনা? চঞ্চলা হরিণীর মতো বয়ে চলা শীতলক্ষ্যার পশ্চিম ধারে অনেকটা পার ঘেঁসেই আমাদের কলেজটা। সেখানে নদীটা খুব সুন্দর একটা বাঁক নিয়েছে। ঠিক যেন কলসি কাঁখে গাঁয়ের বধুর কটির মতো। ভারী সুন্দর দেখতে। ভরা বর্ষায় নদীটা যেন তার হারান যৌবন ফিরে পায়। তখন এই নদীতে অনেক বড় বড় পাল তোলা নৌকা দেখা যায়। আমরা কলেজ ছুটির পর অনেকটা সময় নিয়ে নদীর ঐ বাঁকটায় বসে মাঝে মাঝে পাল তোলা নৌকা দেখতাম। আর দুজনে মিলে গাইতাম আব্বাস উদ্দীনের সেই বিখ্যাত গানটি, 

নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে
ছল ছলাইয়া চলুক রে নাও মাঝ দইরা দিয়া।।

আরে উড়ালি বিড়ালি বাওয়ে নাওয়ের বাদাম নড়ে
আথালি পাতালি পানি ছলাৎ ছলাৎ করে রে
আরে খল খলাইয়া হাইসা ওঠে বৈঠার হাতল চাইয়া।। ........ 

নদীটা এখনো আছে। কিন্তু রোগা পাতলা রোগীর মতো। পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন যদি তুমি কলেজে আসতে, তবে ভয়ে ভয়ে আর গোঁসাই মাঝির খেয়া নৌকায় চড়তে হতো না। অনায়েসে হেঁটেই পার হয়ে আসতে পারতে। তোমার মনে আছে অহনা ঐ দিনটার কথা? ঐ যে নৌকায় চড়ার ভয়ে কান্না জুড়ে দিলে। কারণ নদীটা তখন বর্ষার পানিতে ফুলে ফেঁপে একাকার। তার উপর বিশাল বিশাল ডেউয়ে নৌকার দুল খাওয়ানি। কোন অবস্থাতেই তুমি নৌকায় চড়তে চাচ্ছিলেনা। অগত্যা তোমার সাথে আমাকেও নৌকায় উঠতে হল। আর ঐ দিনটাই হল আমার জীবনের সব চাইতে আনন্দের দিন। নৌকায় তখন মাঝ নদীতে। হঠাৎ বিশাল একটা ডেউয়ে প্রচণ্ডভাবে আমাদের নৌকাটা দুলে উঠলো। আর তুমি চিৎকার করে দু’হাতে আমায় জড়িয়ে ধরলে। আমিও কিছু না বুঝে খুব শক্ত করে তোমাকে বুকে চেপে ধরে রাখলাম। মহাকাল ধরে যেন দুজনে এভাবে একে ওপরকে বুকে জড়িয়ে ছিলাম। 

বুকের ঠিক বাম দিকটাতে আমার হৃৎপিণ্ড
তুমি যেখানটিতে মাথা রেখেছ
এবার কান পেতে শুন 
কিছুই শুনতে পাচ্ছ না?
আহা, দুষ্টুমি রেখে ভালো করে শুনো
ওখানেই আমি তোমার জন্য 
ভালোবাসার মহাসমুদ্র বানিয়ে রেখেছি
ধমনী শিরা উপশিরা, প্রতিনিয়ত 
সেই ভালোবাসা আমার সমস্ত গায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। 

‘ভাইজান নাম্বেন না? বেবাগতে নাইম্মা গেছে।’ গোঁসাই মাঝির ডাকে দুজনেই কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে পরে গেলাম। তোমার মনে পড়ে অহনা এই নিয়ে দুজনে পরে কতো হাসা হাসি করেছি। কিন্তু লজ্জায় তোমার মুখটা ঠিকই লাল হয়ে যেতো। পড়ন্ত বিকেলে ফুলের পাপড়ির মতো তুমি নুইয়ে পড়তে। তাই বলে কিন্তু ফুলের সৌন্দর্য এতটুকু কমতো না। ঘুমটা পড়া লাজুক নতুন বউয়ের মতো ঐ রূপ এখনো আমার চোখে ভেসে উঠে। ঠিক যেন শীতকালে দূর্বা ঘাসের ডগায় ভোরের আলোয় চিক চিক করা শিশির বিন্দুর মতো। 
কতো দিন আমি কতোভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম, তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো বলে। কিন্তু তোমাকে দেখে বার বারই আমি ভুলে গেছি। ঠিক আমাদের নদীটার মতো। মোহনায় মিশে আনন্দে ভুলে যায় তার পিছনের দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি। কিংবা ঠিক এই মাত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ দেয়া জননীর মতো। সন্তানের মুখ চেয়ে মুহূর্তেই ভুলে যায় যে তীব্র প্রসব ব্যথার কথা। আর এভাবেই দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো আমদের কলেজ জীবন। ভালোবাসার কথা তোমাকে আর বলা হল না। দাঁড়াও, তোমাকে একটা সুন্দর গল্প বলে চিঠিটা শেষ করছি। একটা পাখি একটা সাদা গোলাপকে প্রপোজ করল। গোলাপ বললো, ‘আমি যখন লাল হবো, তখন তোমাকে ভালোবাসবো।‘ পাখিটা নিজের বুক চিঁরে রক্তে রাঙিয়ে দিল গোলাপকে। এখন গোলাপ পাখিকে ভালোবাসে, কিন্তু পাখিটাইতো নাই।” 
সবাই সুখ নিয়ে বাঁচতে চায়। আদনানও তার ব্যতিক্রম নয়। সুখ নিয়েই সে বেঁচে আছে। কলেজ জীবনের ঐ দুটা বছরের সুখই তার সারা জীবনের সুখ হয়ে আছে। কেউ কেউ বলে নারী সঙ্গমেই নাকি সব চাইতে বড় সুখ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। ভালবাসাতেই সব চাইতে বড় সুখ অন্তর্নিহিত। কেউ ভালোবাসা পেয়ে সুখি আর কেউ ভালোবেসে সুখি। অহনাকে ভালোবেসেই আদনান সুখি। 
অহনা সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। তাই ধর্মের বেড়াজাল ভেদ করে সে আদনানকে ভালোবাসার কথা কোনদিন চিন্তা করেনি। অহনাকে ভালবাসতে পেরেছে, এটাই আদনানের চরম পাওয়া, পরম সুখ। তাই সেও কোনদিন অহনাকে ভালোবাসার কথা আর বলতে যায়নি। 

তোমায় ভালবেসেছি মেয়ে
তোমার ভালোবাসা পেতে নয়
কাউ কে ভালোবেসে তুমি সুখে আছ জেনেই
তোমাকে ভালোবাসা আমার সার্থক হয়। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top