GuidePedia

0

অক্টোবরের বাইশ তারিখ। তখন দুর্গাপূজার ছুটি চলছিল। ছেলেটা(গল্পের প্রথম জন) যদিও একা থাকতে পছন্দ করত তবুও তাঁর এক হিন্দু বন্ধুর অনুরধে পূজার মণ্ডোপ দেখতে জেতে বাধ্য হল। মণ্ডপ দেখা শেষ করে পাশেই থাকা বড় একটা ব্রিজের উপর দাঁড়াল তাঁরা। মুক্ত বাতাসে গা হেলিয়ে গল্প করতে করতে উঠে আসে একটা মেয়ের কথা(গল্পের দ্বিতীয় জন)। হিন্দু বন্ধুর
কাছ থেকেই ফোন নাম্বার নেয়া।  তারপর থেকেই ঘটনার শুরু। অচেনা থেকে চেনা, চেনা থেকে বন্ধুত্ব।

এরপর একটি কথা।দুটি কথা।তিনটি কথা।অনেক অনেক কথা।অনেক দুপুর।অনেক বিকেল।ভূগোলের সব নিয়ম মেনে দিনের পর রাত আর রাতের পর দিন আসে।কথার ভাজে কথা জমে।গল্পের মানুষ দুজন একটু একটু করে কাছে আসে।হাতের ওপর হাত পড়ে,মনের ওপর মন। কথার বৃষ্টি ঝরতেই থাকে,থামার কোন নাম নেই।

ভালোই চলছিলো।স্বপ্নগুলো সবে বাইরে এসে আড়মোড়া ভাঙছে।নিমগ্ন দুজন খেয়ালই করেনি আকাশের এক কোণায় কেমন মেঘ জমতে শুরু করেছে।

তার দুই বছর পর জুলাই এর কোন এক বিকেল।ছেলেটির তারিখটা ঠিক মনে নেই।মনে রাখতে চায়ওনা সে।জীবনানন্দ দাস এখানে স্মরণযোগ্য- কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?

মেয়েটার ফোন।ঘুমজড়ানো চোখে ছেলেটা রিসিভ করলো।ঘুম উধাও।মেয়েটার বাবা হঠাৎ প্রচন্ড অসুস্থ।আগে থেকেই মেয়েটার বিয়ের কথা হচ্ছিল।এতদিনকার দমকা হাওয়া হঠাৎ ঝড় হয়ে বেরিয়ে এলো।বিয়ে তাকে করতেই হবে।মেয়েটা নিরুপায়।ছেলেটা নির্বাক।

সেদিনই সন্ধ্যাবেলা।ছেলে আগে থেকেই বাবার পছন্দ করা,বন্ধুর ছেলে।হাসি হাসি মুখে আংটি পড়িয়ে গেল।মেয়েটার চোখের কোণে স্বচ্ছ বিশুদ্ধ জল।ছেলেটার নজরেই পড়লোনা।

গল্পের দুজনের নির্ঘুম রাত কাটে। চারপাশে শুধু ঝরা পাতার মর মর শব্দ যেন দমকা বাতাসের আকুল আবেদন।


কিছুদিন পরের কথা।ঢেউ অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে।মেয়েটার বাবা এখন বেশ সুস্থ।মেয়েটা সব খুলে বলে।ছেলেটার কথা,ছেলেটার চোখের তারায় খুঁজে পাওয়া ভালোবাসার কথা।সব শুনে বাবা অনড়।অন্য ছেলেটাও নিশ্চুপ।ভালোবাসার এতো কাছে এসে ফিরে যেতে চায়না সে।মেয়েটার সব চেষ্টা পানাফুল হয়ে বানের জলে ভেসে যায়। বিয়ে ভাঙ্গার অংকটা অর্ধেক পাতায় এসেই মিলে যায়। ভাগফল ''শুন্য''।

মেয়েটা কাঁদছে।অঝোরে কাঁদছে। না পাওয়ার যন্ত্রণা কান্না হয়ে গলে গলে পড়ছে মেয়েটার গাল বেয়ে।বালিশে মুখ গুজে ফোপাতে ফোপাতে সিদ্ধান্তটি নিয়ে নিলো সে।ছেলেটা চাইলে প্রয়োজনে ভালবাসার টানে ঘর ছাড়বে।আকুল হয়ে ছেলেটিকে ফোন করলো।জানতে চাইল ছেলেটি কি চায়।ফোনের অন্য পাশে জোনাকি জ্বলা নৈশঃব্দ। এক হাতের মুঠোয় ভালোবাসা,অন্য হাতে মধ্যবিত্ত পরিবারের কিছু স্বপ্নমাখা প্রত্যাশার দায়।ট্রাপিজের সরু তারে দুলতে থাকে ছেলেটির মন।যে কোন এক হাত তাকে ছেড়ে দিতে হবে।এমন কঠিন সময় তার জীবনে আর কখনো আসেনি।থেমে গিয়ে ঘড়ির কাটাও কান পেতে আছে,উত্তরের অপেক্ষায়।বুকের ওপর হাজার মণী পাথর চেপে ছেলেটি অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো।কোন কথা না বলে রইলো নিরুত্তর।মেয়েটির সম্মানের কথা ভেবেই আজানার পথে পারি দিতে পারেনি ছেলেটি। কিন্তু মেয়েটি ততক্ষণে তার উত্তর পেয়ে গেছে। রাত্রি কালো চোখে রাত আরো গাঢ় হয়ে নামে।

২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার। এই দিনটার কথাও ভুলে যেতে পারলে ভালো হত।কিন্তু বাস্তবতা বড় বেশি নিষ্ঠুর। মানুষের সব চাওয়া পূরণ করে দেবার মত উদারতা তার কোন কালেই ছিলোনা। ছেলেটারও তাই আর ভুলে যাওয়া হয়না। লাল শাড়িতে দুঃখগুলোকে পেচিয়ে পরিবারের সবচেয়ে আদরের ছোট মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়।সবাই অনেক খুশি,মেয়েটি খুশি হয়েছিল কীনা তা জিজ্ঞেস করার মত সময় কারোরই ছিলোনা।
তারপর......?? মেয়েটি সুখী হয়েছিল কিনা তা ছেলেটি জানত না। মেয়েটি এখনও তার কথা ভেবে কাঁদে কিনা তাও জানা হয়নি ছেলেটির। হঠাৎ একদিন জানতে পারে মেয়েটির সংসার আর বেশি দিন টেকে নি। তার স্বামী নেশা করত, মাঝে মাঝে মারধরও করত। একদিন তার স্বামীর অমানবিক অত্যাচারে আর সইতে না পেরে স্বামীর ঘর ছেড়ে বাবার বাড়িতে পারি জমায়।

তারপর.........?? 

তার আর পর নেই, এভাবেই দুটো হৃদয় ভাঙার আটপৌরে এই গল্পের এখানেই আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়। আড়ালে আড়ালে গল্পের মানুষ দুজনের গল্প তবু এত অল্পেই শেষ হয়ে যায়না। দুঃখরা যে এতো সহজে নিঃশেষিত হতে চায়না।
........কলম থামিয়ে ছেলেটা এখন অঝোরে কাঁদছে। প্রিয় পাঠক,আপনি চাইলে এখনই চলে যেতে পারেন। কিন্তু সেই ছেলেটি চাইলেও আর নাতুন করে জীবন সাজাতে পারবে না। কারণ ছেলেটির কান্নার এখনো অনেক বাকি। সে কান্না কখন থামবে তার উত্তর ক্রমশ গাঢ় হয়ে আসা রাত্রি ছাড়া আর কারো জানা নেই।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top