GuidePedia

0
পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করে। আপাতত সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না তারা। তবে যে কোনো সময় দেশে বড় ধরনের গ্রেনেড হামলার চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা।

সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের সীমান্তে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন তেহেরিক-ই-তালিবানের অস্ত্রাগার ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। সেখান থেকে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এরা মিয়ানমারের আরাকান (বর্তমান রাখাইন) রাজ্যেও ঘাঁটি গেড়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া তিন জঙ্গি সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের এমন তথ্য জানিয়েছে।

গত রোববার রাতে মেহমুদ, ওসমান ও ফখরুল নামে তিন পাকিস্তানি জঙ্গিকে সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তাদের ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ডিবি পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেশে জঙ্গিদের গোপন তৎপরতা চলছে। বেশ কয়েক মাস ধরে দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা চালাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের গ্রেপ্তার না হওয়া নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সদস্যদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া তেহেরিকই-ই-তালিবানের সদস্য মেহমুদ ও উসমান অত্যাধুনিক অস্ত্র চালানো, গাড়িবোমা তৈরিসহ প্রায় ১২ ধরনের বোমা তৈরি করতে পারদর্শী। দেশি-বিদেশি জঙ্গিরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকবার দেশে বড় ধনের বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে না থাকায় প্রথম দফায় সেটা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশে ধ্বংসাত্মক কাজ করার জন্য পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে দেশীয় জঙ্গিরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে।’

ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি সংগঠন ‘তেহরিক-ই-তালিবান অব পাকিস্তান’-এর কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার বোমা তৈরি করা, বোমা হামলা চালানো; বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহার এবং যুদ্ধের কৌশল সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখিত জঙ্গি সংগঠনটির একজন তরুণ নেতা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। ওই নেতার সঙ্গে বাংলাদেশি ইসলামী দল ও জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলেও তারা জানায়।

ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা মায়ানমারভিত্তিক ’তেহরিক-ই-আজাদি আরাকান’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে যুদ্ধ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া তিন জনই উর্দুভাষী হলেও উসমান ও ফকরুল বাংলা কিছু কিছু বলতে পারে। ফখরুল অপর দুইজনের গাইড হিসেবে তাদেরকে ঢাকা থেকে টেকনাফ নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে স্বপরিবারে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে পাকিস্তান পাড়ি জমায়। দেশীয় অনেক জঙ্গি সদস্য পাকিস্তানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বর্তমানে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও হিযবুত তাওহীদের শীর্ষ স্থানীয় তাত্ত্বিক নেতাদের তত্ত্বাবধানে দেশে ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। প্রায় দেড়মাস আগে গ্রেপ্তার ফকরুল বাংলাদেশে আসে। মেহমুদ ও উসমান আগে থেকেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এরা আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়। দেড় মাস আগে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা পাকিস্তানে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ফকরুল দশম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বোমা ‘গ্রেনেড’ বিস্ফোরণের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসায় দেশি জঙ্গি সংগঠনের নেতারা দেশে ফিরে যেতে বাধা দেয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পাকিস্তানি জঙ্গিদের এদেশে নিয়ে আসার পেছনে দেশের কিছু ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও ভূমিকা থাকতে পারে। গ্রেপ্তারকৃত পাকিস্তানি জঙ্গিদের কাছ থেকে কোনো বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে শীর্ষ নেতাদের কাছে তাদের পাসপোর্ট জমা থাকতে পারে। বাংলাদেশে সহিংসতা চালাতে ব্যর্থ হয়ে মিয়ানমারের আরাকানিদের সহায়তা করার জন্য ‘তথাকথিত জিহাদে’ অংশ নেয়ার পরিকল্পনাও করেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আফগানিস্তানে যুদ্ধে ট্রেনিংপ্রাপ্ত অনেক জঙ্গি সদস্য বর্তমানে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কক্সবাজারের গোপন বৈঠকে বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে একত্রিত হয়। সেখানে তথ্য আদান প্রদান করার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা, দেশে জঙ্গি হামলা চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করারও চিন্তাভাবনা করে তারা। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেই জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতা পরিকল্পনা ছিল। আগেও কয়েক দফা পরিকল্পনা করে তারা সফল হতে পারেনি। অবশ্য যে কোনো সময় তারা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে বলে তথ্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জঙ্গিদের নতুন করে উত্থান শুরু হয়। পাকিস্তানে আত্মগোপনে থাকা হরকাতুল জিহাদ, জামায়াতুল মুসলেমিন ও আল কায়দা মতাদর্শের বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতার কাছ থেকে ‘বিশেষ বার্তা’ পেয়ে শায়খ মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী প্রকাশ্যে মাঠে নামে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারির কারণে শায়খ জসীম ও তার শিষ্যরা গোপন বৈঠককালে বরগুনায় ধরা পড়ে। গোপন বৈঠকের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অন্য আরো অনেক জঙ্গি এক হয়। এমনকি এরা জামায়াত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ায়। জঙ্গিরা এক হয়ে নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করে। ঝালকাঠি ও বরগুনায় বৈঠক করতে গিয়ে এর আগে আরো অনেক জঙ্গি সদস্য ধরা পড়ে। বর্তমানে ছয় শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতা মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থেকে জঙ্গি সদস্যদের একত্রিত করতে ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে। বাংলামেইল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top