GuidePedia

0
 সত্য ঘটনা অবলম্বনে

৪৪৫ বছর আগের এক মমি। পাশেই রাখা তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা তার প্রিয়তমা স্ত্রীর বেদনাবিধূর প্রেমপত্র। নারীটি সেসময় ছিলেন সন্তান-সম্ভবা। দক্ষিণ কোরিয়ার আনডং শহর থেকে একজন পুরুষের মমিকৃত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর সাথে পাওয়া গিয়েছে ১৩ টি চিঠি। পুরুষটির নাম সম্ভবত ইয়ং-তি। ১৩ টি চিঠির মাঝে একটি চিঠিই খুবই মর্মস্পর্শী, যেটি এই লোকটির মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন ও সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর লেখা। এই চিঠিটি ২০০০ সালে উদ্ধার করে অনুবাদ করা হয়, যা থেকে সেই নারীর স্বামী হারানোর বেদনার ও এর ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগের কথা জানা যায়।
৪৪৫ বছরের পুরনো এক মমি ও তার স্ত্রীর লেখা বেদনাবিধূর প্রেমপত্র

চিঠিটি লেখা হয়েছে ‘ওন এর বাবা’ ইয়ং-তি’র উদ্দেশ্যে। তার মমির উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। ঐ সমাধিতে আরো ১২ টি চিঠির সাথে এই চিঠিটিও পাওয়া যায়। মমিটির বুকের উপর এই চিঠিটি তার স্ত্রীই রেখেছিলেন, যাতে লেখা হয়েছিল, “ এই চিঠিটির দিকে ভালভাবে তাকাও, স্বপ্নে আমার কাছে পুরোপুরিভাবে দেখা দিও।“ নারীটির আক্ষেপ কেন তার স্বামী ইয়ং-তি তাকে ও তার সন্তানদের একা রেখে চলে গেলেন। এখন তিনি জানেন না কিভাবে তিনি তার স্বামীকে ছাড়া জীবন অতিবাহিত করবেন।

তিনি লিখেছেন, “আমি তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবো না। আমি তোমার কাছে চলে যেতে চাই। তুমি যেখানে আছো, দয়া করে আমাকেও সেখানে নিয়ে যাও। আমার দুঃখের কোন সীমা নেই ও তোমাকে ভুলে যেতে পারবো না।“ বিজ্ঞানীরা বলছেন এই চিঠিটি ১৫৬৮ সালে লেখা হয়েছে , যদিও এর লেখক নারীটির নাম জানা যায় নি। তবে যাকে উদ্দেশ্য করে এই চিঠিটি লেখা হয়েছে তার ব্যপারে আরো কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ইয়ং-তি কোরিয়ার প্রাচীন জোসেয়ং ই বংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আনডং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিউজিয়ামের Se-kwon Yim এই মমিটি প্রথম আবিষ্কারকারী ব্যক্তিদের একজন। মমিটির পাশে রুচিসম্মত কাগজে মোড়ানো এক জোড়া জুতা পাওয়া গিয়েছে, যেটি তৈরি করা হয়েছে নারীদের মাথার চুল দিয়ে। এ বিষয়ে ইয়ং তি’এর স্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন,”আমার চুল দিয়ে আমি এটি বুনে তোমার সামনে রাখলাম, যাতে তুমি যে কোন সময় এটি পরতে পারো।“

চুল দিয়ে জুতা তৈরির বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হতে পারে অনেকের কাছে। তবে কোরীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এটির কথা বার বার এসেছে, ভালোবাসার নিদর্শন ও অসুস্থতা থেকে সেরে উঠার আশাজ্ঞাপক হিসেবে। যেহেতু মমিটি একটি কংক্রিটের সমাধিতে ছিল, তাই মমি, এর সাথে থাকা জুতা ও চিঠি বেশ ভালভাবেই সংরক্ষিত হয়েছে। তবে ইয়ং তি ঠিক কত বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। আর আবিষ্কারের পর থেকে সেই নাম না জানা নারীর লেখা চিঠি অনেক অপেরা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উপন্যাস লেখককে অনুপ্রাণিত করেছে সৃজনশীল কিছু তৈরি করতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top