GuidePedia

0
আত্মা কি সত্যিই মানুষের উপর ভর করতে পারে?- রইলো একটি সত্য ঘটনার কথা

আত্মা কি সত্যিই মানুষের উপর ভর করতে পারে?- রইলো একটি সত্য ঘটনার কথা
রোনাল্ড ডো এর জন্ম ১৯৪০ সালে একটি জার্মান লুথারিয়ান খ্রিস্টান পরিবারে। কিন্তু এই পরিবারটি বাস করতো যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে। রোনাল্ড ছিল তার বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। যেহেতু তাকে বাইরে খেলতে দেয়া হত না তাই সে ঘরেই বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আপন মনে খেলতো। সেসময় তার খেলার সঙ্গী ছিল তার আন্টি হ্যারিয়েট। হ্যারিয়েট ছিলেন প্রেত-সাধক ও তিনি নিজে আত্মা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশ্বাস করতেন। একদিন তিনি রোনাল্ডকে উইজা বোর্ড এনে দেন ও সে এটিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। যারা প্রেত সাধনা করেন তারা বিশ্বাস করেন উইজা বোর্ডের মাধ্যমে মৃত আত্মাদের ডেকে আনা যায়।
রোনাল্ডের বয়স যখন ১৩ বছর তখন হ্যারিয়েট সেইন্ট লুইসে মারা যান। বেশ কয়েকটি বইয়ে দাবি করা হয়েছে হ্যারিয়েটের মৃত্যুর পর রোনাল্ড তার সাথে উইজা বোর্ডের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে। থমাস বি এলেন এই ঘটনা অবলম্বনে একটি বই লিখেন যার নাম ‘robbie mannheim’। এখানে তিনি রোনাল্ডের নাম পরিবর্তন করে দেন, কিন্তু মূল ঘটনা এই ছেলেটিকে কেন্দ্র করেই। থমাস তার বইতে লিখেন, “হ্যারিয়েটের মৃত্যুর পর পরই বাড়িতে অতিপ্রাকৃত ঘটনা শুরু হল। রোনাল্ডের বাড়িতে কোন একজনের শব্দ করে হাঁটার অদ্ভুত শব্দ শোনা যেত, এছাড়াও হতো আরো রহস্যময় শব্দ। ঘরের আসবাবপত্রগুলো নিজ থেকেই স্থান পরিবর্তন করতে লাগলো। অনেকের দাবি অনুযায়ী, ঘরের সাধারণ জিনিস যেমন ফুলদানি ভেসে বেড়াতে শুরু করলো। এছাড়া দেয়ালে লাগানো যীশু খ্রিস্টের ছবি এমনভাবে নড়তে শুরু করলো যে কেউ ছবিটিকে ধাক্কা দিচ্ছে। ছবির কাছেই কিছু পবিত্র জল রাখা ছিল, যেগুলো হঠাৎ করেই মাটিতে পড়ে যায়। ৯ জন পাদ্রী ও ৩৯ জন প্রত্যক্ষদর্শী এ ঘটনার বিষয়ে লিখিত বর্ণনা দেন।
ভয়ার্ত অবস্থায় রোনাল্ডের পরিবার তাদের লুথারিয়ান পাদ্রী রেভারেন্ড লুথার মিলজ স্কালজের সাহায্য চান। এর আগে রোনাল্ডকে চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানী দ্বারা পরীক্ষা করা হয় কিন্তু তাদের কাছে কোন ব্যাখ্যা ছিল না। ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ, লুথার ছেলেটির কক্ষে এক রাতের জন্য অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য। রোনাল্ড ঘুমিয়ে গেল। লুথার গভীর রাতে বিছানা ও দেয়াল থেকে অদ্ভুত ধরণের শব্দ শুনলেন। এছাড়া বিছানার পাশে থাকা একটি আর্মচেয়ার হঠাৎ করেই নড়তে শুরু করলো। তিনি উপসংহারে এলেন যে, রোনাল্ডের দেহে পিশাচ ভর করেছে। অবিলম্বে এক্সোরসিজম শুরু করার কথা বলা হলো, যেটি দিয়ে রোনাল্ডের দেহে ভর করা পিশাচ দূর করা হবে। এংলিকান চার্চের অনুমতিক্রমে, রেভারেন্ড এডওয়ার্ড হিউগস জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি হাসপ্তালে এক্সোরসিজম শুরু করলেন। এক পর্যায়ে রোনাল্ড তাকে আঘাত করে আহত করে ফেলে, যার কারণে পুরো প্রক্রিয়া কিছুদিন বন্ধ থাকে। এরপর রোনাল্ড ও তার পরিবার সেইন্ট লুইসে যায়। রোনাল্ডের একজন কাজিন সেইন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রেমন্ড যে বিশপের সাথে যোগাযোগ করেন। রেমন্ড ও আরেকজন রেভারেন্ড উইলিয়াম এস বোডের্ন রোনাল্ডকে দেখতে তার বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন রোনাল্ডের বিছানা নিজ থেকেই নড়ছে, ঘরের জিনিসপত্র ভেসে বেড়াচ্ছে আর রোনাল্ড কথা বলছে ভয়াবহ স্বরে।
এ অবস্থায় আর্চ বিশপের অনুমতিক্রমে ফাদার ওয়াল্টার হেলোরান রেভারেন্ড উইলিয়াম এস বোডের্ন ও হাসপ্তালের মনোবিজ্ঞানীদের উপস্থিতিতে এক্সোরসিজম শুরু করলেন। রোনাল্ডের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণা করেছিল, সে ঘুষি মেরে ফাদার ওয়াল্টারের নাক ভেঙ্গে দেয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে ত্রিশ বার এক্সোরসিজম করতে হলো। চূড়ান্ত পর্যায়ে পুরো হাসপাতাল ভয়াবহ শব্দে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। যাই হোক, রোনাল্ড এরপরে সুস্থ হয়ে উঠে ও একটি সুখী জীবন লাভ করে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে অনেকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা বের করতে চেষ্টা করেন। কেউ বলেছেন রোনাল্ড dissociative identity disorder, Tourette's syndrome, schizophrenia, sexual abuse, group hysteria কিংবা Obsessive-compulsive disorder-এ ভুগেছিল। কিন্তু এক্সোরসিজমের সময় উপস্থিত চিকিৎসকরা রোনাল্ডের দেহে কোন রোগের অস্তিত্ব বা লক্ষণ দেখেন নি। তাহলে রোনাল্ডের দেহে কি সত্যিই কোন পিশাচ বা অশুভ আত্মা ভর করেছিল। তার মৃত আন্টির আত্মা কি ফিরে এসেছিল? কেউ জানে না। কারণ রোনাল্ডের কিছুই মনে পড়ছিল না!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top