GuidePedia

0
প্রথমেই একজন সফল ফ্রি-ল্যান্সারের গল্প বলে লেখাটি শুরু করতে চাই। মেহেরপুরের জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরক। বাড়িতে বসে ইন্টারনেটে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করছেন।  তার কাছ থেকে প্রশিন নিয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও অনেক বেকার যুবকের।


জেলার সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরক ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন বিবিএ ও এমবিএ। পরে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শেখেন। বছর দুই আগে চলে আসেন নিজের গ্রাম.. চাঁদবিলে। বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে প্রতি মাসে তার আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
আউটসোসিং প্রশিক্ষক জিন্নাত হিরক জানান, গ্রামের বেকার যুবকদের সংগঠিত করে গড়ে তোলেন ইউনিক সফ্ট আউটসোর্সিং নামের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বিনা খরচে এখানে গ্রামের বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই এখন কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

এলাকার বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তিতে রূপান্তর করায় জিন্নাত হিরকের ওপর খুশি এলাকাবাসীও।

আউট সোর্সিং:
এবার আসি কাজের কথায়। প্রথমেই জানা যাক আউট সোর্সিং সম্পর্কে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটসোর্সিং বলে।
ফ্রি-ল্যান্সার:
যাঁরা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে দেন, তাঁদের ফ্রিল্যান্সার বলে। ফ্রিল্যান্সার মানে হলো মুক্ত বা স্বাধীন পেশাজীবী। আউটসোর্সিংয়ের কাজের খোঁজ থাকে, এমন সাইটে যিনি কাজটা করে দেন, তাঁকে বলা হয় কনট্রাকটর (তিনি কনট্রাক্টে কাজ করেন)। আর যিনি কাজ দেন, তাঁকে বলে বায়ার/এমপ্লয়ার (তিনি কনট্রাক্টে কাজ দেন)।

যে ধরনের কাজ পাওয়া যায়:

আউটসোর্সিং সাইট বা অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজগুলো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা থাকে। যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও তথ্যব্যবস্থা (ইনফরমেশন সিস্টেম), লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা (ঈঁংঃড়সবৎ ঝবৎারপব), বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসাসেবা ইত্যাদি।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট:

এই বিভাগের মধ্যে আছে আবার ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং, ই-কমার্স, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন, ওয়েবসাইট টেস্টিং, ওয়েবসাইট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট:

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টর মধ্যে আছে ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন, গেম ডেভেলপমেন্ট, স্ক্রিপ্ট ও ইউটিলিটি, সফটওয়্যার প্লাগ-ইনস, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারফেস ডিজাইন, সফটওয়্যার প্রকল্প-ব্যবস্থাপনা, সফটওয়্যার টেস্টিং, ভিওআইপি ইত্যাদি।

নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম:

এর মধ্যে আছে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডিবিএ-ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইআরপি/সিআরএম ইমপ্লিমেনটেশন ইত্যাদি।

রাইটিং ও ট্রান্সলেশন:

এর মধ্যে আছে কারিগরি নিবন্ধ লেখা (টেকনিক্যাল রাইটিং), ওয়েবসাইট কনটেন্ট, ব্লগ ও আর্টিকেল রাইটিং, কপি রাইটিং, অনুবাদ, ক্রিয়েটিভ রাইটিং ইত্যাদি।

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্ট:

এর মধ্যে আছে ডেটা এন্ট্রি, পারসোনাল অ্যাসিসট্যান্ট, ওয়েব রিসার্চ, ই-মেইল রেসপন্স হ্যান্ডলিং, ট্রান্সক্রিপশন ইত্যাদি।

তবে এইসব কাজের ভিতরে সবচেয়ে সহজ হল ওয়েব রিসার্চ ও ডেটা এন্ট্রি ।

ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া:

এই বিভাগের মধ্যে আছে গ্রাফিক ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন, প্রিন্ট ডিজাইন, থ্রিডি মডেলিং, ক্যাড, অডিও ও ভিডিও প্রোডাকশন, ভয়েস ট্যালেন্ট, অ্যানিমেশন, প্রেজেন্টেশন, প্রকৌশল ও কারিগরি ডিজাইন ইত্যাদি।

কাস্টমার সার্ভিস:

এর মধ্যে আছে কাস্টমার সার্ভিস ও সাপোর্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট, ফোন সাপোর্ট, অর্ডার প্রসেসিং ইত্যাদি।

বিক্রয় ও বিপণন:

এর মধ্যে আছে বিজ্ঞাপন, ই-মেইল বিপণন, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন), এসইএম (সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং), এসএমএম (সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং), জনসংযোগ, টেলিমার্কেটিং ও টেলিসেল্স, বিজনেস প্ল্যানিং ও মার্কেটিং, মার্কেট রিসার্চ ও সার্ভেস, সেলস ও লিড জেনারেশন ইত্যাদি।

বিজনেস সার্ভিসেস:

এর মধ্যে আছে অ্যাকাউন্টিং, বুককিপিং, এইচআর/পে-রোল, ফাইনানসিয়াল সার্ভিসেস অ্যান্ড প্ল্যানিং, পেমেন্ট প্রসেসিং, লিগ্যাল, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, বিজনেস কনসাল্টিং, রিক্রুটিং, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ ইত্যাদি। এগুলো সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কাজ পাবেন যেখানে: আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়া যায় এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে। আবার ভুয়া সাইটও বের হয়েছে। ফলে সতর্ক হয়েই কাজ শুরু করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সাইটের ঠিকানা দেওয়া হলো:

http://www.odesk.com, (সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ)

http://www.freelancer.com,

http://www.elance.com,

http://www.getacoder.com,

http://www.guru.com,

http://www.vworker.com,

http://www.scriptlance.com ইত্যাদি।

বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ওডেস্ক(odesk)। গত বছর (২০১১) সারা বিশ্বের মধ্যে আউটসোর্সিং কাজ করার ভিত্তিতে ওডেস্কে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ। তার আগের বছর (২০১০) ওডেস্কে ঢাকা শহরের অবস্থান ছিল সারা বিশ্বের মধ্যে তৃতীয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top