GuidePedia

0
কুকুর বিড়ালের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এক বন্যশিশু

মানুষ কি পশুর সাথে সারাজীবন থাকতে পারে? হয়তো পারে হয়তো পারে না৷ কিন্তু জন্মের পাঁচ বছর পযর্ন্ত ফুটফুটে এক শিশু সত্যি সত্যিই ছিল কুকুর আর বিড়ালের আশ্রয়ে৷ ঘটনাটি রাশিয়ার সাইবেরিয়ার অঞ্চলের চিতা শহরের৷
কুকুর বিড়ালের সঙ্গে বেড়ে ওঠা এক বন্যশিশু
কেউ কেউ এই মেয়েটিকে ডাকছে মোগলি নামে৷ কিপলিং-এর ‘জাঙ্গল বুক'-এর সেই বিখ্যাত বন্যশিশু মোগলির নামে৷ রুশ পুলিশ যখন মেয়েটিকে উদ্ধার করলো, তার সঙ্গে তখন ছিল তার বন্ধু কুকুর আর বিড়ালরা৷ উদ্ধারের সময়ে কুকুরের মত সে হামলে পড়েছিল পুলিশের উপর৷

বাট হোল রোডের সেই বাড়িটি
চিতা শহরের পুলিশের দফতের অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে জানালো বাট হোল রোডের এক পুরানো বাড়িতে সে শিশুর কান্নার মত এক শব্দ শুনতে পেয়েছে৷ তার সন্দেহ সেখানে একটি শিশু রয়েছে৷ ফোন পাওয়া মাত্র আর থেমে থাকা নয়৷ পর্যটকদের আকর্ষণীয় এ স্থানে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি দেখে থমকে গিয়েছিল অনেকেই৷ ঐ বাড়িতে ঢুকেই নাক বন্ধ করা গন্ধ পেয়ে পুলিশের মনে হলো এখানে তো মানুষ থাকতে পারে না৷ কিন্তু তাদের এই বুঝতে পারাটা ভুল বলেই চিহ্নিত হলো, কারণ তারা দেখতে পেলো ঘরে আটকে আছে একটি শিশু৷ সঙ্গে বেশ কয়েকটি কুকুর বেড়াল৷ শিশুটির পরনে ছেড়া জীর্ণ এক টুকরো কাপড়৷ কোন কথা বলতে পারে না সে৷ কেবল ডাকতে পারে কুকুরের মতো৷ হয়তো সে ঐ ভাষায় কথা বলে তার সঙ্গীদের সাথে৷ এর আগে সে কোন মানুষ কে দেখেনি৷ তাই মানুষ দেখেই পালিয়ে যাবার চেষ্টা ছিল তার৷ ভাঙ্গা খোলা জানালা দিয়ে বাইরে ঝাঁপ দিতেও চেয়েছিল সে৷ কিন্তু পারেনি৷ পুলিশের ধারণা সে কখনোই বাইরের দুনিয়া দেখেনি৷ আর মানুষের সাহচর্যে না থাকার কারণে সে শিখেছে পশুর ভাষা৷ শিখেছে লম্ফ ঝম্ফ৷

কি নাম মেয়েটির?
মেয়েটিকে এ কালের মোগলি বলা যেতে পারে৷ কিন্তু একটা নাম আছে ওর, নাতাশা৷ পুলিশ তন্ন তন্ন করে ঐ বাড়ির বিভিন্ন কাগজ পত্র পরীক্ষা করে পায় মেয়েটির মায়ের হদিশ৷ পরে তাকে আটক করা হয়৷ অভিযোগ শিশু নির্যাতন৷ এই মা জানিয়েছে তার মেয়ের নাম নাতাশা৷ কিন্তু মেয়েটিকে আটক করে রাখা হয়েছে কেন? প্রশ্নের সচতুর উত্তর মায়ের, তার মেয়ে জন্মের কিছুদিন পর হারিয়ে যায়৷ পরে আর খুঁজে পায়নি সে৷ তার এই বক্তব্যকে সত্যি বলে গ্রহণ করতে নারাজ পুলিশ৷ মেয়েটির বাবা কে? উত্তর এখনো আসেনি মায়ের কাছ থেকে৷ পুলিশ বসে নেই৷ চলছে তথ্য উদ্ধারের সকল কর্মকান্ড৷

পুলিশ যা বলছে
পুলিশের কাছে তথ্য অনুসারে মেয়েটির বয়স পাঁচ৷ কিন্তু তাকে দেখায় দুই কিংবা তিন বছরের মেয়ের মত৷ ফুটফুটে এই শিশুটিকে ঐ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নেয়া হয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রে৷ সেখানে মনোবিজ্ঞানীরা তার চিকিৎসা শুরু করেছে৷ বুধবার উদ্ধার করার পর মেয়েটিকে ঐ কেন্দ্রে রাখার পা সেখানে তাকে চামচ দিয়ে খাবার দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কিন্তু সে এভাবে খাবার খেতে শেখেনি৷ আর তাই প্রচন্ড অনীহা খাবারের উপর৷

রোগের নাম মোগলি সিনড্রোম
শিশুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে, আশাবাদ মনোবিজ্ঞানী আর চিকিৎসকদের৷ বললেন,এ ধরনের আরও একটি পূর্ব উদাহরণ তাদের কাছে রয়েছে৷ ফলে এ অভিজ্ঞতা দিয়েই তারা মেয়েটিকে ভালো করে তুলতে পারবেন৷ তারা এর নাম দিয়েছেন মোগলি সিনড্রোম৷ মেয়েটি ভাষা বুঝতে পারে, কিন্তু বলতে পারে না৷ তাকে ভাষা শেখালে সে কথাও বলতে পারবে৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top