GuidePedia

0

আজাদের মা 
১৯৮৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আজাদের মা। তার ঠিক ১৪ বছর আগে ৭১ এর আগস্টে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পরে আজাদ। এই পুরা ১৪ বছর
আজাদের মা ভাত না খেয়ে কাটিয়েছেন। কারণ শেষ দেখার সময় আজাদ তার কাছে ভাত চেয়ে পায়নি। ১৪ বছর কোন বিছানায় ঘুমাননি, তার ছেলে মিলিটারি টর্চার সেলে বিছানা পায় নি বলে।

ইয়াসিন এর মা
সারাহ ইগে তার সাত বছর বয়সী পুত্র ইয়াসিনকে হাফেজ বানাতে চেয়েছিলেন। টার্গেট ছিল প্রতি তিনমাসে ৩৫ পাতা করে মুখস্থ করানো। ইয়াসিন এক বছরে মাত্র এক অধ্যায় শেষ করতে সক্ষম হয়। হতাশ হয়ে মাঝে মাঝে লাঠি দিয়ে মারতেন তার মা। বেশী ক্ষেপে গেলে জুতা, ছোট একটা হাতুড়ি দিয়ে মারতেন। মাঝে মাঝে ঘুষিও চলত। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ইয়াসিন এর মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। শুরুতে দুর্ঘটনা ভাবা হলেও পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে তার মৃত্যুর জন্য তার মা দায়ী। তার মা এককথা স্বীকার করলেও বলেছেন আসলে এজন্য শয়তান দায়ী। তার ভাষ্যমতে শয়তান তাকে প্ররোচনা দিয়েছে সন্তানকে মারার জন্য। সেটাই স্বাভাবিক। ঈশ্বর কখনো নিজ সন্তানকে হত্যার পরামর্শ দেয়না। শেষবার ইব্রাহিমকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইসমাইলকে হত্যার জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দুম্বা এসে গলা পেতে দিয়ে জানটা বাঁচিয়েছিল।

অতুলের মা
সাতব ছরের অতুলকে বাঘে তুলে নিয়ে যায়। মা ক্ষেতে কাজ করছিল। কাস্তে হাতে বাঘের পেছনে ধাওয়া করেন তিনি। তাও আবার যেনতেন বাঘ না, চিতাবাঘ। উসাইন বোল্টও চিতাকে ধাওয়া করে ধরতে পারবে কিনা জানিনা। কিন্তু অতুলের মা পেরেছিল। এক পর্যায়ে ভয়ে অতুলকে মুখ থেকে ফেলে পালায় চিতা।

আনুশা এর মা
কাশ্মীরের বাসিন্দা পনের বছর বয়সী আনুশা। এক মোটরসাইকেল আরোহী ছেলের দিকে পরপর দুইবার তাকানোর কারণে তার বাবা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। তারপর তার মা তার গায়ে এসিড ঢেলে দেয়। দুইদিন এভাবেই ফেলে রাখা হয় আনুশা কে। তারপর যখন হাসপাতালে নেয়া হয় তার শরীরের বেশীরভাগ পুড়ে গেছে। ফলাফল মৃত্যু। তার মা এসিড নিক্ষেপ করাটা ঠিক হয়নি, আর কখনো এমন করবোনা বলে ক্ষমা চেয়েছেন। সেই সাথে এও বলেছেন, ওর নিয়তি ছিল এভাবে মরা। It was her destiny to die this way.

আমার মা
আমার বড় ভাইয়ের জন্ম ৭১ এর ২৭শে মার্চ। মোটামুটি ভয়ঙ্কর অবস্থা। মা ভাইকে নিয়ে সাইরেন বাজলেই ঘর ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে মাটির গর্তে গিয়ে লুকাতো। নানী বারবার সাহায্য করতে চাইলেও মা নাকি ভরসা পেত না। দুইহাতে ভাইকে আঁকড়ে ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু পরিমাণ কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে থাকতো। তারপর দুই মাসের ভাইকে কোলে নিয়ে সড়কপথ, জলপথ, হাঁটাপথ সব মিলিয়ে ঝিলিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নেয়া। বড় ভাইয়ের উপর ক্ষেপে গেলে আম্মা বারবার এক রাতের গল্প শুনাত। শীতের এক রাত। গ্রামে যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে বিছানা বালিশ এর ঠিকঠিকানা নেই। মাঝরাতে মা হটাত খেয়াল করলো ভাই বিছানার একপাশ ভিজিয়ে ফেলেছে। তাকে সরিয়ে অন্য পাশে শোয়ানো হল। একটু পরে সেই পাশও ভিজিয়ে ফেললো ভাই। ভাইকে নিজের বুকে শুইয়ে রেখে বাকি রাত শেষ করলো মা। ছোটবেলায় যতবার এই গল্প শুনেছি এর মর্মার্থ মাথায় ঢোকেনি। বরং বড় ভাই বারবার বিছানা ভেজাচ্ছে এটা শুনে হা হা হি হি করে কুল পেতাম না আমরা।

সাফিলিয়ার মা
২০০৩ সালে সতের বছর বয়সী সাফিলিয়া তার বাসা থেকে হারিয়ে যায়। ছয় মাস পর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কেন্ট নদীতে। সাত বছর পর তদন্তে সত্য বের হয়ে আসে। ইউকে তে বড় হওয়া সাফিলিয়া পশ্চিমা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে চাইত। পশ্চিমা চালচলন, পোশাকআশাক আর বাবা মায়ের পছন্দে বিয়েতে রাজী না হবার কারণে সাফিলিয়ার উপর নির্যাতন চলত। অবশেষে কমিউনিটিতে নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য সাফিলিয়ায়াকে তার বাবার সহায়তায় মুখে প্লাস্টিক ব্যাগ চেপে ধরে হত্যা করে তার মা। তারপর লাশ ফেলে দিয়ে আসে নদীতে। সাক্ষী দেয়ার সময় সাফিলিয়ার ছোট বোন বলে, প্লাস্টিক ব্যাগে মুখ চেপে ধরার পর তার মা উর্দুতে তার বাবাকে নির্দেশ দিয়েছিল "এখানেই একে শেষ কর" বলে।

কাকের মা
আমাদের বাসার পিছনের আমগাছে কাক একবার বাসা বেঁধে মহা ঝামেলা শুরু করলো। আম পাড়তে গেলে কা কা কি কি করে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলত। তবে ওই ওয়ার্নিং পর্যন্তই। আমরা খুব বেশী কাছে না গেলে তেমন একটা ঝামেলা করতো না। আমরা আম টাম পেড়ে নিয়ে যাবার সময় কক্ক কক্ক করে একটা বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। ভাবখানা যে এইবারের মতো মাফ করে দিলাম। বরং সুবিধাই ছিল এটা একটা। কেউ আম চুরি করতে আসলে আমাদের কাকেরা অ্যালার্ম সিস্টেম হিসেবে কাজ করতো। কা কা শব্দ শুনলেই আমরা আমগাছে দৌড়ে যেতাম চোর ধরার জন্য। কিন্তু একদিন বাচ্চা দেয়ার পর কাকের মায়ের চেহারা পাল্টে গেল। ধারে কাছে ১০ ফুটের মধ্যেই গেলেই সে কি তার রুদ্রমূর্তি। আমি একদিন একটা রাম ঠোকর খেয়ে পালিয়ে আসলাম। বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত সে একাই আমাদের আম গাছের ধারে কাছে যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিলো।

পরিশিষ্ট
একজন ভালো মানুষ হবার জন্য একটা মানুষের অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। কারো শিক্ষা, কারো ধর্ম, কারো অন্য ভালো মানুষের সঙ্গ। তবে একজন ভালো মা হবার জন্য বোধকরি মানুষ হয়ে জন্মানোও প্রয়োজন নেই। কাক হয়ে জন্মালেও চলবে। তবে একজন খারাপ মা হবার জন্য কি প্রয়োজন সেটা ভাবি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top