GuidePedia

0

কাগজে লেখা কিছু শব্দ আপনার ভালোবাসাকে জাগিয়ে তোলে নতুন করে। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন তার হবু স্ত্রীকে চিঠিতে লিখেছিলেন, 'প্রিয় লিভি, তুমি সুন্দর ... তোমার বিশাল হূদয়ে আমাকে ছোট্ট একটি ঘর দাও... যদি আমি তা পেতে ব্যর্থ হই তবে সারা জীবন ঘরছাড়া যাযাবর হয়ে থেকে যাব।' চিঠির এই ভাষাই পরে তাকে কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষকে পেতে সফল করেছে। হূদয় হতে নিঃসরিত কিছু কথা পৃথিবীর সব উপহারের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার। আর হূদয়ের কথা ব্যক্ত করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো 'চিঠি'।
উপভোগ করা যায়। তাই ভালোবাসার দিনটিতে প্রিয়জনের কাছে অন্যান্য উপহারের সাথে একটি চিঠিও সংযুক্ত করুন যা তার প্রতি আপনার ভালোবাসাকে আবারও প্রকাশ করবে। আপনার প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানাতে যে চিঠি আপনি লিখছেন তা লেখার সময় কিছু কিছু দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যেমন প্রথমে আপনি যা লিখতে চান তা লিখে নিন। অতঃপর তা আরেকবার নির্ভুল করে লিখে ফেলুন। চিঠিটি রোল করে রিবন বেঁধে কিংবা খামে ভরে আপনার বা আপনার প্রিয়জনের পছন্দের একগুচ্ছ ফুলের সাথে পৌঁছে দিন। কিংবা চিঠিটি কোনো মজার চকোলেটের বক্সের সাথেও পাঠাতে পারেন। চিঠির উপযুক্ত পরিবেশন একে প্রাপকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। চিঠি লিখে ভালোবাসা প্রকাশ করা নতুন উদ্ভাবিত কোনো পন্থা নয়। বহু আগে থেকেই এর প্রচলন হয়ে আসছে। ইতিহাসের সর্বত্র উল্লিখিত রয়েছে 'লাভ লেটার'-এর গুরুত্বের কথা। চিঠি দুজন মানুষের মধ্যকার দূরত্বকে কমিয়ে আনতে পারে তা তারা একজন অপরজনের চেয়ে যত দূরেই থাকুক না কেন। চিঠির মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে। বিখ্যাত কবি খলিল জিবরান এবং আমেরিকার স্কুল শিক্ষিকা ম্যারি তাদের ২৭ বছরের বন্ধুত্বে বহু চিঠি আদানপ্রদান করেছেন। আপনার লেখা চিঠি প্রকাশ করবে মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, আপনার হতাশা, নিরাপত্তাহীনতা। এমনকি চিঠির মাঝে কৌতুকও করতে পারেন প্রিয়জনের সাথে। কারণ চিঠিতে মজার কিছু থাকলে তা আপনার প্রিয়জনের ক্লান্তিকে মুছে দেবে। কেবলমাত্র ভালোবাসার প্রাথমিক পর্যায়ে চিঠি লিখতে হয় এ ধরনের ধারণা করা ভুল। ভালোবাসার যেকোনো পর্যায়েই চিঠি লিখতে পারেন। এমনকি স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে চিঠি লিখতে পারেন। যেমনটি লিখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ তার স্ত্রী গুলতেকিনকে আমেরিকায় প্রবাসকালে। আর সেই চিঠির প্রভাব ছিল এমনই যা গুলতেকিন আহমেদকে যেতে বাধ্য করেছে প্রবাসে স্বামীর কাছে। ভালোবাসার এমনই জোর ছিল কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা ও রফিকুল আলমের ভালোবাসার চিঠিতে। তারই দৃষ্টান্তস্বরূপ সেই সময়ে লেখা তচিঠির প্রতিনিলিপ তুলে ধরা হলো।

কেমন আছ? আচ্ছা

তুমি সেই যে আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলে, তখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা, ভাবতে পারো মা, আব্বার কাছে আমার কী অবস্থা? বুড়িগঙ্গায় নৌকাতে যে আমাদের পুলিশ ধরল, সে কথাটা কীভাবে মাকে বলি বলতো? গানের রিহার্সেল করে আর কত মিথ্যা কথা বলা যায়? তারপরও তুমি ভুল করে তোমার মাফলারটা ফেলে আমার মাফলারটা নিয়ে রাজশাহী চলে গেলে, ওটা আমি কোথায় লুকাবো? রিহার্সেলে খুরশিদ ভাই (খুরশিদ আলম) ছিলেন তার সাথে চেঞ্জ হয়েছে, এ কথা বলে কাটালাম কিন্তু প্রতি মুহূর্তে টেনশন হচ্ছে এই বুঝি কোনো কারণে খুরশিদ ভাই বাড়িতে চলে আসেন তা হলে তো ছয় তারিখের যে কোনো রিহার্সেলই ছিল না এটা জেনে যাবে। যা হোক তোমার কী অবস্থা? খালাম্মার শরীর এখন কেমন? উনি কি আমার কথা কিছু শুনেছেন? হেনা কেমন আছে? ভালো লাগছে না জানো। এই যে সময় তুমি পাঁচ-ছয় দিনের জন্য দেশে যাও, আমার ভাল্লাগেনা। এই কয়দিন আমার জীবনে কোনো আনন্দ থাকে না। ভাবছিলাম মেজো বুবুর বাসায় গিয়ে তোমাকে একটা ফোনও করব কিন্তু চাচি আম্মা পছন্দ করেন না ওখান থেকে ফোন করি। কারণ উনি বুঝে ফেলেছেন এ ফোনটা গোপন। খুবই স্বাভাবিক উনি পছন্দ করেন না ফোন করা। এই জানো? বুবু না সব বুঝে ফেলেছে। আমাকে একেবারে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করল, 'শিখা, তোমার সঙ্গে কথা আছে।' আমি বললাম, বলো। আমিও বুঝতে পারছিলাম ও কি বলবে। বলল, 'তুমি কি রফিককে বিয়ে করবে?' আমিও ওর দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে বললাম, হ্যাঁ, আমি সে রকমই ভাবছি। ও একটা উপদেশমূলক বক্তব্য দিয়ে আলোচনা শেষ করল। বলল, 'তো ঘুরাঘুরি না করে মাকে বলো, ঘুরাঘুরি করলে বদনাম হয়।' আমি বললাম, আচ্ছা, সাথে সাথে আমার মনে হলো তুমি কবে আসবে আর আমরা শ্যানে রেস্টুরেন্টে খেতে যাব, তোমার সঙ্গে যে আমার চব্বিশ ঘণ্টাই ঘুরতে ইচ্ছা করে।

ভাল্লাগে না।

খুব তাড়াতাড়ি আস।

আমি।

(রফিকুল আলমকে লেখা আবিদা সুলতানার চিঠি)

শিখা,

তুমি কেমন আছো? ফেরী ঘাটে আসলে দেরি হলো, বাড়িতে ঢুকতেই লেগে গেল আরও প্রায় আট ঘণ্টা, মানে ধরো সাড়ে এগারোটা বাজল, যখন পৌঁছলাম। গতকাল থেকেই টেলিফোনে ট্রাই করছি। লাইন পাওয়া যায় না। তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাদের বাড়ির পাশে ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্ট একটা অফিস থেকেও চেষ্টা করলাম। কারণ সরকারি অফিস থেকে অনেক সময় লাইন পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি। হলো না। তাই লিখতে বসলাম।

কক্সবাজারের ছবিগুলো এখনও পাইনি। আমার খুব ইচ্ছা করছিল রাজশাহীর সকলকে (যারা আমার ঘনিষ্ঠ) তাদেরকে দেখাতে।

আসলে দূরে না এলে বোঝা যায় না তোমার অনুপস্থিতি কত কষ্টদায়ক। প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে তোমার সাথে কথা বলতে। উপায় নেই, ঢাকার ঠিকানায় চিঠি দিলাম। তাহলেও তাড়াতাড়ি চিঠি পাঠাতে পারবে। নিপুদের ঠিকানাতেও দিতে পারি। শেষ করলাম।

তোমার প্রাণের প্রিয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top