GuidePedia

0
অভিনেত্রী মিতা নূর মারাত্মক মাদক ইয়াবা ও আইসপিলে আসক্ত ছিলেন। শারীরিক গঠন সুন্দর রেখে অভিনয় জীবনে সুনাম কুড়াতেই ইয়াবা জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। এক সময় তাতে রীতিমত আসক্ত হয়ে পড়েন। ইয়াবার আসক্তি কাটাতেই তিনি শেষ পর্যন্ত স্লিপিং পিল সেবন শুরু করেন। এজন্য তার ৪০ থেকে ৪৫টি স্লিপিং পিল সেবন করলেও কিছুই হতো না। দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারতেন। যেখানে কোনো স্বাভাবিক মানুষ ১০ থেকে ১২টি স্লিপিং পিল সেবন করলেই মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেখানে মিতা নূর বছরের পর বছর দিনে ৪০/৪৫টি করে স্লিপিং পিল সেবন করে কাটাতেন। কেউ বুঝতেই পারত না। দীর্ঘদিন ইয়াবা সেবনের ফলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে মিতা নূরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ, সিআইডি ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ লাশের নানা আলামত সংগ্রহ করেছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে।
ঘটনার পর থেকেই মিতা নূরের পিতা, মাতা, ছেলে, বোনসহ পরিবারের সবাই পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, মিতা নূর অতিরিক্ত ঘুমের বড়িতে আসক্ত ছিলেন। মিতা নূরের ছেলে সাদমান নূরের দাবি, তার মা কোনো কোনো দিন ৪০ থেকে ৪৫টি পর্যন্ত স্লিপিং পিল সেবন করতেন।
নিহতের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে মিতা নূর প্রেম করে রানাকে বিয়ে করেন। এরপর তাদের সংসারে নানা টানাপোড়েন চলছিল। টানাপোড়েনের মধ্যেই খিলগাঁও বসবাস করছিলেন তারা। এরপর রানার মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা বাড়ায় মিতা নূর।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান মাফিয়ার হাত ধরে মিতা নূর অভিনয় জগতে পা রাখেন। ওই মাফিয়া সম্রাটের কল্যাণে অলিম্পিক ব্যাটারির আলো আলো বেশি আলো নামে সুপরিচিত অলিম্পিক ব্যাটারির বিজ্ঞাপন করে রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
এরও অনেক আগে দেশে ইয়াবা ও আইসপিলের আমদানি হয়। এর আমদানিকারক হিসেবেও ওই মাফিয়া ডনের নাম নানাভাবেই ঘুরে ফিরে আসে। মিতা নূর প্রথম প্রথম নিজেকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতেই ইয়াবা সেবন শুরু করেন। ইয়াবার সরবরাহ কারকও ওই মাফিয়া ডন। তিনিই মিতা নূরকে ইয়াবা দিতেন। এরপর চরম ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে ফুর ফুরে মেজাজে রাখতেই ইয়াবার শরণাপন্ন হতেন মিতা নূর।
ওই সময় অনেক সফলতাই ধরা দেয় তার কাছে। টিভি অভিনয়ে রীতিমত দাপিয়ে বেড়াতে থাকেন। একে একে সংসারে স্বচ্ছলতা আসতে থাকে। ততদিনে মিতা নূর স্বামীকে নিয়ে খিলগাঁওয়ে বাড়ি থেকে চলে যান ওই এলাকারই ছায়াবীথি ফ্ল্যাটে। সেখানে বছর তিনেক থাকার পরই গুলশান লেকের পাড়ের ওই ফ্ল্যাটটি ৪০ লাখ টাকায় কিনেন।
মিতা নূরের সফলতার পিছনেও রয়েছেন ওই মাফিয়া সম্রাট। তার হাত ধরেই ইয়াবা জগতে প্রবেশ করেন মিতা নূর। প্রথম প্রথম নিজের শরীরের গঠন ধরে রাখতেই ইয়াবা সেবন শুরু করেন। এরপর রীতিমত আসক্ত হয়ে পড়েন।
অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের ফলে সাধারণত ঘুম হয় না। ফলে খুব স্বাভাবিক কারণেই মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়। মিতা নূরের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কয়েক বছর ধরে তিনি অভিনয়ে তেমন সময় দিচ্ছিলেন না। ওই সময়টায় তিনি ইয়াবার বৃত্ত থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন। দীর্ঘ দিন ঘুম না হওয়ায় তার মনে ও শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। মিতা নূর ইয়াবার নেশা ছাড়ার চেষ্টা শুরু করেন। এতে তার ঘুম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে থাকে। তিনি চিকিত্সক ও ইয়াবা সেবীদের পরামর্শ মোতাবেক স্লিপিং পিল সেবন শুরু করেন।
প্রিয় বহুবার এ প্রতিবেদকের কাছে বলেছে, যেদিন আম্মু বলতেন, আজ ওভার ডোজ করেছি, ধরেই নিতাম ন্যূনতম ৪০ থেকে ৪৫টি বা কোনো কোনো দিন ৪৫ থেকে ৫০টি পর্যন্ত ঘুমের বড়ি আম্মু খেয়েছেন। তখন আমরা কেউ না কেউ তার কাছাকাছি থাকতাম। গত বছর একবার ৪৫টি ঘুমের বড়ি খেয়ে তিনি ফ্ল্যাটের দরজা লাগিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে বের করে গুলশানের হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। চিকিত্সকরা আম্মুর পেট ওয়াশের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আম্মুই শেষ পর্যন্ত করতে দেননি। আম্মু বলেছিলেন, দেখো আমার কিছুই হবে না। সত্যি কিছুই হয়নি। তবে পরিবারের দাবি, মিতা নূর স্লিপিং পিলে আসক্ত ছিল। অন্য কোনো কিছুতেই তার আসক্তি ছিল না।
এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম  বলেন, দীর্ঘদিন কোনো বক্তি মারাত্মক ধরনের মাদক যেমন ইয়াবা বা আইসপিলে আসক্ত থাকলে তার পক্ষেই কেবল এত ঘুমের বড়ি সেবন করা সম্ভব। এ ধরনের রোগীরা অতিরিক্ত আবেগ প্রবণ হয়ে আত্মহত্যা করে থাকে। মিতা নূরের ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে।

সুত্র// hello-today

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top