GuidePedia

0
মোবাইল বিনোদনের জনক হিসেবে খ্যাত। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মোবাইলনির্ভর কনটেন্ট এবং বিনোদন প্রচারে কাজ করে যাচ্ছেন। 

সত্তর দশকে সাইমন ‘জোমবা গ্রুপ অব মিউজিক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দেন। এখানে মিউজিক রেকর্ড স্টুডিও ছাড়াও বিপণনের কাজ করতেন। অল্প সময়ের মধ্যেই লাভের মুখ দেখেন সাইমন। কারণ এ সময় লন্ডনে মিউজিক নিয়ে তরুণদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে ছিল। দীর্ঘ সময় পর নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হলিউডে চর ক্যাপিটাল রেকর্ড অ্যান্ড ব্লু রেকর্ড ডিভশনে চাকরির অফার পেয়ে যান।

এ সুযোগ মোটেও হাত ছাড়া করেননি সাইমন। উড়ে যান সরাসরি হলিউডে। সেখানে ক্যাপিটাল স্টুডিওর সহ-সভাপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মিউজিক এবং প্রযুক্তি দুটির ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে উঠেন সাইমন। তিনি খুব গভীরভাবে খেয়াল করলেন সারা বিশ্বে মোবাইল কনটেন্ট ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন তা থেকে সাইমন সহজেই অনুমান করেছিলেন সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন মানুষ পুরোপুরি মোবাইলনির্ভর হয়ে পড়বে।

এটি ১৯৯৭ সালের ঘটনা। তিনি সবাইকে বোঝাতে থাকলেন ভবিষ্যতে মানব জীবনের প্রধান লাইফস্টাইল হবে মোবাইল। এ জন্য মিউজিক বা সংগীতকে মোবাইলে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিউজিক ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে থাকেন। তিনি বলেন, মিউজিক একমাত্র মোবাইলের মাধ্যমে খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

তবে স্বত্ত্ব নিয়ে আইনি সমস্যার আশঙ্কা থাকছে। মিউজিশিয়ানরা তাদের স্বত্ত্ব দাবি করবে বলেও কথা উঠল। তিনি তখন মিউজিশিয়ানদের অনুমতির ভিত্তিকে মোবাইলে মিউজিকের রিংটোন যুক্ত করার প্রস্তাব দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিউজিক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল অপারেটররা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল রিংটোন। ঠিক এ ঘটনার জন্য সাইমনকে বলা হয়, মোবাইলে রিংটোনের জনক।

নিজের আইডিয়া। সুতরাং ব্যবসায় নিজেকে প্রমাণ করতে মোটেও পিছিয়ে ছিলেন না সাইমন। তিনি রিংটোন প্রতিষ্ঠান খুলে বসলেন। তাও একটি দেশে নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ইউনাইটেড কিংডম, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাতে প্রতিষ্ঠান করেন ‘ইওর মোবাইল’। তবে ২০০৩ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর মিউজিক প্রতিষ্ঠান সিমনের ‘ইওর মোবাইল’ প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেয়।

নিজের প্রতিষ্ঠান বিক্রি হওয়া নিয়ে মোটেও বিচলিত নন মিন। এবারে তিনি নিজেকে নতুন ভাবনায় নিমগ্ন করলেন। ভাবনা আর বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যবধান মাত্র এক বছর। ২০০৪ সালে তিনি ভাবলেন, খুব দ্রুত মানুষ নিজের সংস্কৃতি এবং আর্থিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই মোবাইলনির্ভর হবে। এবারে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘মোবিলজি’।

আজও এ মোবিলজি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। সিমনের এ ধারণা হয়ে উঠল গবেষণার বিষয়বস্তু। বিশ্বব্যাপী গবেষকেরা মোবিলজি বিশ্বে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ‘লিভ আর্থ’ প্রকল্প। মোবাইল ব্যবহার করে বিশ্ব পরিবেশ রক্ষা এবং দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন সাইমন। বিশেষ করে ২০১০ সালে ‘হোপ ফর হাইতি’ নামে একটি প্রচারণা চালান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

এ লিভ আর্থ প্রকল্পটি মূলত আল গোরের উদ্যোগ ছিল। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়ার পদ্ধতিটি ছিল সাইমনের। একটি এসএমএস করলে এ অর্থ চটজলদি সংশ্লিষ্ট ফান্ডে পৌঁছে যাবে। এ ধরনের ক্যাম্পেইনকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করতে সাহায্য করেছেন সাইমন।

সাইমন একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এ মুহূর্তের বিশ্ব মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে। এর চেয়ে বড় আবিষ্কার আর কি হতে পারে? এ ছাড়াও বিনোদনের খোরাক জোগাতে মোবাইলও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা নয়, মোবাইল ফোনের ওপর মানুষ এখনই নির্ভর করছে।

নানা উদ্ভাবনে ব্যস্ত এ মানুষটি এখনও অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের এ দেশ থেকে ওদেশে। এখনও নিত্যনতুন আইডিয়ায় মোবাইল ফোনকে জনপ্রিয় ও মানবজীবনে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পুরস্কার নিয়ে তিনি কখনও কোনো মন্তব্যও করেননি।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পর পর তিন বছর মোবাইল বিনোদন প্রতিষ্ঠানের সেরা কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১০ সালে গ্লোবাল মোবাইল এন্টারটেইনমেন্ট শিল্পে অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা পদক অর্জন করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top