GuidePedia

0
দূর ছাই! কিচ্ছু মনে থাকে না। স্মৃতিশক্তিটা কি কমে গেল? নিজেদের প্রতি এ জাতীয় অভিযোগ আমরা হরহামেশাই করে থাকি। আর বয়স হলে আরও বেশি করি। আবার অনেকেই আছেন যারা সুস্থ তীক্ষষ্ট মস্তিষ্ক নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন। শেষ দিনটি পর্যন্ত মেধা আর অটুট স্মৃতিশক্তি বলে কাজ করে যান মানুষের জন্য। কি করে সম্ভব হয়? তীক্ষষ্ট মেধা, অটুট স্মরণশক্তি মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হলেও এগুলো অক্ষুণ্ন রাখাও মানুষেরই কাজ।

স্মৃতিশক্তি কমে কেন


মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে গেলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। কমে যায় চিন্তা করার স্বাভাবিক ক্ষমতা। দেহের কোষগুলোতে শক্তি উত্পাদনের জন্য প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এসব জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষগুলোতে কিছু ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়। এ যৌগগুলো কোষের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং এক পর্যায়ে কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে আমরা বার্ধক্যের পথে এগিয়ে যাই। একই ব্যাপার মস্তিষ্কের কোষগুলোতেও ঘটে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কোষগুলোও বুড়িয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক ক্ষমতা। আমাদের স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। এছাড়া কোনো কারণে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যায়। হৃিপণ্ড থেকে শতকরা ২০ ভাগ রক্ত সরাসরি মস্তিষ্কে যায়। রক্তের কোলেস্টেরল বা অন্য কোনো কারণে ধমনীর প্রাচীর সরু হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হয়। দেখা গেছে, যারা হৃদরোগী তারা সাধারণত ভুলোমনা হয়ে থাকে। একই কারণে স্ট্রোক করলে মানুষের স্মরণশক্তি এবং চিন্তাশক্তিও দারুণভাবে কমে যায়।

আর দুশ্চিন্তা নয়


দুশ্চিন্তা বা টেনশনে মানুষের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে গ্লুকোকরটিকয়েড নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে দ্রুত আক্রান্ত করে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। সুস্থ মস্তিষ্ক আর শাণিত মেধা নিয়ে বেঁচে থাকুন দীর্ঘ দিন।

ইতিবাচক চিন্তা করুন


নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। তাই মনের পরিচর্যা করুন। নিজেকে নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজে।


ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করুন


ক্রোধ বা রাগ মন ও মস্তিষ্কের শত্রু। আমরা যখন রেগে যাই তখন শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

মেডিটেশন করুন


নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। এ অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।


পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন


সারাক্ষণ কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। ক্লান্তি মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমান। দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে।

বুঝেশুনে খাবার খান


বুঝেশুনে খাবার খেলে যদি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়, হৃদযন্ত্র সচল রাখা যায় তাহলে মগজকে কেন শাণিত করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। চাই খাদ্য সচেতনতা। এ ব্যাপারে প্রথম পরামর্শ হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিকর জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উত্পন্ন ক্ষতিকর যৌগগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে। ফলে কোষগুলো থাকে কর্মক্ষম আর তারুণ্যদীপ্ত। তাছাড়া অ্যান্টঅক্সিডেন্ট শিরা-ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হৃিপণ্ড সচল, মগজটাও টনটনে। প্রাণীজ আমিষ খেয়ে শরীরে হিমোসিস্টিন নামক এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড উত্পন্ন হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ হিমোসিস্টিন উত্পাদনের প্রক্রিয়াও বেড়ে যায়। এ হিমোসিস্টিন ধমনীর প্রাচীরে জমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই মাছ-মাংস পরিমিত খাওয়াই সঙ্গত।

তাহলে কী খাবেন?


আগেই বলা হয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো খাবার। মূলত ভিটামিন-ই এবং সি হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন। দুধ, কলিজা, সয়াবিন, সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। সমপ্রতি পশ্চিমা গবেষকরা নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন। এগুলো হলো পালং শাক, ব্লুবেরি এবং স্ট্রবেরি। সয়াবিন আর রসুনের প্রতিও তারা আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের যুক্তিটা হলো রসুন-সয়াবিন রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল সুষ্ঠু হয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোও সচল থাকে। বিজ্ঞানীরা ফলিক এসিডসহ ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অন্যান্য ভিটামিনের প্রতিও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন একই কারণে। বিশেষ করে হিমোসিস্টিন দূর করতে ভিটামিন বি-১২ এর জুড়ি নেই।

মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার মস্তিষ্ক, যা তাকে আর সব প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ করে রেখেছে। মস্তিষ্কের তাই যত্ন নেয়া চাই। মেধা, মনন, বুদ্ধি—এসবই হলো সুস্থ মস্তিষ্কের ফসল। সঠিক চিন্তা, সুস্থ জীবনাচরণ, সুষম খাবার—এ হলো সুস্থ মস্তিষ্কের মূলমন্ত্র।

ডা. গোলজার হোসেন উজ্জ্বল
চিকিত্সক ও স্বাস্থ্য নিবন্ধকার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top