GuidePedia

0
সারা গায়ে ছবি আঁকার অনুমতি দেবেন৷ পরনে থাকবে কেবল একটি জি-স্ট্রিং৷ বারো ঘণ্টা সময় ব্যয় করবেন৷ বিনিময়ে নেবেন মাত্র দু বোতল বিয়ার৷ অস্ট্রিয়ার ওয়ার্ল্ড বডি পেইন্টিং কম্পিটিশনে মডেলদের অধ্যাবসায় দেখে হতবাক শিল্পী সনাতন দিন্দা৷ ফিরে এসে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন দেবলীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায়-
‘দেহ’শিল্প

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ওয়ার্ল্ড বডি পেইন্টিং কম্পিটিশনের কথা আমি আগেই জানতাম৷ আমি নেট স্যাভি৷ তাই নেট-এ দেখেই অ্যাপ্লাই করি৷

আমার আঁকা একটা ছোট্ট ছবি দিয়ে আবেদন করতে হয়৷ ওঁদের খুব পছন্দ হয় ছবিটা৷ ভারত থেকে এই প্রথম কোনও শিল্পী আবেদন জানান৷ ওঁরা খুব খুশিহয়েইআমারআবেদনস্বীকারকরেন৷ তিন বছরেরজন্যআমারভিসাস্যাংশন হয়ে যায়৷ স্বামী এসে অনুরোধকরেনমহিলাকেবিবসনা করে ছবি এঁকেদিতেবডি পেইন্টিংনিয়েঅস্ট্রিয়ায়একটা তিন বছরেরকোর্স হয়৷ খুব কঠিনপুরোবিষয়টা৷যাওয়ার আগে তাই হাল্কাটেনশনছিলই৷ওখানেগিয়ে দেখিসেএকএলাহিব্যাপার৷চারিদিকেমানুষশরীরে বডি পেইন্টকরাচ্ছেন৷কতমেয়েএসেছেভলান্টিয়ারকরতে৷এমনওহয়েছেমহিলারা জোর করেছেনযেএঁকেদিতেই হবে তাঁদেরশরীরে৷একমহিলারস্বামী এসে আমাকেঅনুরোধকরেনমহিলাকেবিবসনা করে তাঁরদেহে ছবি এঁকেদিতে৷ভাবতেপারেন! আমি তোবিশ্বাসইকরতেপারছিলাম না৷ আসলে এটা তাঁদেরকাছেএকটাপবিত্রশিল্প৷এখানেশরীর মানে ক্যানভাস, কামনারবস্তু নয়৷ প্রথমপর্যায়েআমাদের থিম ছিল ‘প্ল্যানেটফুড’৷ আমি খাবারবলতেপৃথিবীরআদিমতমখাবারমাতৃদুগ্ধরকথাই বুঝি৷মাহলএকটাশিশুরকাছেসবকিছু৷ তার বিশ্রামের, বিশ্বাসেরজায়গা৷ তাই আমি শিশুমাতৃদুগদ্ধ পান করছে সেই ছবি আঁকি৷সঙ্গে আপেলেরএকটাপ্রতীকওব্যবহারকরি৷আরকোমরেঝুলিয়ে দিই আমপাতা৷এই ছবি এঁকেই আমি প্রতিযোগীতায়প্রথমদশজনেরমধ্যেচলে আসি৷পরেরবারের থিম ছিল ‘হোলিজিওমেট্রি’৷এখানে আমি দেবীদুর্গাকেএঁকেছিলাম৷তৃতীয় নয়ন আরস্বস্তিকচিহ্নসহ (ছবিতে)৷ আসলে দুর্গামানেতোশুধুদেবীনয়, পুরোবিশ্বচরাচরওবটে৷পিঠেশিবলিঙ্গএঁকেছিলাম৷গায়েমন্ত্রলিখেদিয়েছিলাম৷মাথায় জটা করে থার্মোকল দিয়েত্রিশূলতৈরি করে দিয়েছিলাম৷

বারো ঘণ্টা সেই নারীর কোনও জৈবিক চাহিদা থাকতে পারবে না

যদি বলেন অনুভূতির কথা, বলব আমার কাছে কাগজ আর নারীর নগ্ন শরীরে কোনও ফারাক নেই৷ ওটা একটা আলাদা ক্যানভাস মাত্র৷ আকর্ষণ যেটাথাকেসেটানারীশরীরেরপ্রতিনয়, ওইনতুনক্যানভাস, তাঁরখাঁজ, তাঁরমোচড়েরমধ্যেদিয়েশিল্পটাকেসৃষ্টিকরারমধ্যে৷নগ্ন নারীশরীরমানেইকীশুধুকামনারবিষয়? মোটেই না৷ যে চোখ দিয়ে আমি আমারমেয়েকেদেখি, আমার পরম বন্ধুকেদেখি সেই চোখ দিয়েইদেখেছিলামঅ্যানাকে৷আমারমডেল৷শিকাগোথেকেএসেছিল৷ প্রথমবার যখন রং করি, দেখি রং কেটে যাচ্ছে৷ পছন্দমতো রং আসছে না৷ নরম শরীরে রঙের আঁচড় ঠিকমতো ফুটছে না৷ এবার কার ত্বক কেমন, আগে থেকেবোঝারউপায়নেই৷অয়েলিস্কিনেএকরকমরংফোটে, ড্রাইস্কিনেঅন্যরকম৷ওখানকারলোকেদেরসঙ্গে কথা বলতেশুরু করি৷অনেকপড়াশোনাওকরি৷তারপরকিছুটাধাতস্ত হই৷ সেএকঅভিনবঅভিজ্ঞতা৷ ওখানকার মডেলরাও অসাধারণ৷ কলকাতায় তিন-চার ঘণ্টার কাজের কথা বললেই মডেল ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে৷ কিন্তু ওখানে ছ’ঘণ্টা লাগত আঁকতে, দু’ঘণ্টাহেয়ারড্রেসিংআর চার ঘণ্টারপারফরম্যান্স৷ভাবতেপারেনবারোঘণ্টা সেই নারীরকোনওজৈবিকচাহিদাথাকতেপারবে না৷ আর ওরা পরিবর্তে নেয় মাত্রদু’বোতলবিয়ার৷অ্যানাআমাকে বলত-’এটা শুধুতোমার কাজ নয়, আমারওকাজ৷আমিওতোতোমার সঙ্গেএকটাশিল্পেরজন্মদিচ্ছি৷’এইডেডিকেশন, এইএকসঙ্গে কাজ করারঅনুভূতিইকাজের মান অনেকঅনেকবাড়িয়েদেয়৷

জি-স্ট্রিং পরা কোনওমডেলদেখলেওকামনা-বাসনাজাগেনা


শিল্পী গুস্তাভ ক্লিম্ট আমার গুরু বলতে পারেন৷ ওঁর কাজ দেখে আমি অনেক শিখেছি৷ তাঁর দেশে গিয়ে আমি অভিভূত৷ ভুললে চলবে না এটা মোত্‍জার্টেরও দেশ৷ এ তো গেল আমারপ্রিয় দুই শিল্পীরকথা৷ আরও অনেকঅনেকগুণীমানুষজন্মেছেনঅস্ট্রিয়ায়৷ আগে প্যারিসগিয়েছি, ইতালি গিয়েছি৷কিন্তুএরকমভালোলাগেনি৷ছবির মতো শহর৷কোনও চোর, ডাকাত, ঠগ নেই, জানেন? শিল্পীবললেইলোকেআলাদাসম্মান করেন৷ ভারতের হয়ে প্রথমবার জিততে পারিনি, ঠিকই৷ কিন্তু ওখানকার মানুষের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছি৷ অনেকেই বলেছেন প্রথমবারের তুলনায় আমি অনেক ভালোপারফর্মকরেছি৷কোনওপ্র্যাকটিসকরিনি আগে, লোকেবিশ্বাসইকরতেচায়নি৷ মাত্র এই ক’দিনেই অনেক বদলে গিয়েছি আমি৷ ওঁদের জীবনদর্শনটা অন্য রকম৷ মনে হয় আমিও সেটা রপ্ত করতে পেরেছি৷ জীবনকে অনেক গভীরভাবে নিতেশিখেছি৷ তাই তোজি-স্ট্রিং পরা কোনওমডেলদেখলেওকামনা-বাসনাজাগে না৷ শিল্পটাইমাথায় আসে সবারআগে৷ এটা কী কম কথা বলুনতো! নারীমানেশুধুশরীরনয়, এটাই আরও একবারএইপ্রতিযোগীতাশিখিয়েছেআমায়৷ এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী-ই বা হতে 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top